ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত এখন নতুন চ্যালেঞ্জ

প্রফেসর তামান্না সরকার
নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত এখন নতুন চ্যালেঞ্জ

মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য। মূলত আমাদের অস্তিত্ব খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। সাধারণত যেসব আহার্য জীবদেহের বৃদ্ধি, শক্তি উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ এবং ক্ষয়পূরণ করে অর্থাৎ দেহের পুষ্টি সাধন করে তাকে খাদ্য বলে। দেহের কাজ কর্ম সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত করে দেহকে সুস্থ ও কাজের উপযোগী রাখার জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন, সেসব উপাদানই খাদ্য। খাদ্যের নিরাপত্তা হলো এক বা একাধিক পদক্ষেপ যা ভোক্তার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খাদ্যকে বিভিন্ন দূষক বা বিপত্তি যেমন : ভৌতদ্রব্য, অনুজীব (ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস), রাসায়নিক দ্রব্য ও অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান থেকে রক্ষা করে। খাদ্যকে দূষিত করতে পারে, তথা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক খাদ্যহিত যে কোনো কিছুকে বাধা-বিপত্তি বলা হয়। তাই সুস্থ সবল জাতি গড়তে খাদ্যের নিরাপত্তা ও পুষ্টি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। খাদ্য সংশ্লিষ্ট বিপত্তি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে খাদ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২৫(১) ধারায় প্রত্যেক মানুষের খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ আছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) ও ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য খাদ্যের মৌলিক চাহিদা পূরণ আবশ্যক। ৩ জুন ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১৯৯৬ সালের বিশ্ব খাদ্য শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত সংজ্ঞা অনুযায়ী সব সময়ে সব নাগরিকের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাপ্তির ক্ষমতা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। ২০০০ সালে বাংলাদেশের জন্য একটি সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা সুসংহত করা শুরু হয়। বিগত দশকে বাংলাদেশে খাদ্যব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, যেখানে দারিদ্র্যপীড়িত ও দুস্থ পরিবারগুলোর জন্য চাল ও গমের সহজলভ্যতা সৃষ্টি, খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পুষ্টিকর নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার আবশ্যকতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ২০১৫ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ হলো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, সরবরাহ, বিপণন এবং বিক্রয় প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা। কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম সার্বিকভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে বেশ কিছু বিধি-প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছে। দক্ষ ও সতর্ক হাতে খাদ্য তৈরির উপর খাদ্যের নিরাপদতা ও পুষ্টিগুণ বহুলাংশে নির্ভর করে। খাদ্যের নিরাপত্তা একটি বহুমাত্রিক বিষয়। তাই খাদ্য ক্রয়, প্রস্তুত, রান্না, পরিবেশন ও সংরক্ষণের প্রতিটি ধাপে খাদ্য কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়, সে বিষয়ে পারিবারিক পর্যায়ে সবার ধারণা থাকতে হবে। খাদ্যের বিভিন্ন বিপত্তি (ঐধুধৎফ) সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা এবং এগুলো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখা সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে। কেউ কেউ আবার সারাজীবনের জন্য রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং বংশ-পরম্পরায় আক্রান্ত হচ্ছে। খাদ্যবাহিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী ও প্রসূতি মহিলা এবং যারা আগে থেকেই অন্য কোনো কারণে অসুস্থ। প্রাকৃতিক এবং আমাদের অভ্যাসগত ও অসাবধানতাজনিত কারণেও খাদ্য অনিরাপদ হয়। উৎপাদন ও প্রস্তুত পর্যায়েও দূষণের কারণে খাদ্য অনিরাপদ হতে পারে। সাধারণত ৪টি উপায়ে খাদ্য অনিরাপদ হয়: ভৌত-ধুলা-ময়লা, চুল, পাথর কণা ও আবর্জনা ইত্যাদির উপস্থিতিতে, রাসায়নিক মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ (যেমন : কীটনা এন্টিবায়োটিক, সংরক্ষণ দ্রব্যের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, আর্সেনিক, সীসা ইত্যাদি)-এর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিতে, জৈবিক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও অন্য জীবাণুর উপস্থিতির ফলে; এবং অ্যালার্জি সৃষ্টিকার কিছু কিছু পদার্থ যেমন : প্লুটেন, ল্যাকটোজ ইত্যাদির উপস্থিতির কারণে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত