ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খাবারের অপচয় রোধ

সচেতনতামূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান
খাবারের অপচয় রোধ

‘অপচয় করো না, অভাব হবে না’। এমনি একটি প্রবাদ আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। মানুষ বিশেষ করে খাবারের ক্ষেত্রে যে অপচয় করে, সেটি রোধ করা গেলে সংসারে হয়তো খাদ্যের তেমন কোনো অভাব থাকত না। এমনি করে আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় রোধ করা গেলে অনেক সাশ্রয় হতো। সরকার তুলনামূলক কম খরচে উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করতে পারত। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যয় সংকোচনের ব্যাপারে বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যও বাড়ছে। ধর্মীয়ভাবেও অপচয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়। আমাদের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গত শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও খাদ্যের অপচয় বন্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, দেশে বছরে ৪ কোটি মেট্রিক টন ধান ছাঁটাই করা হয়। চার থেকে পাঁচবার ছাঁটাই করে চাল চকচকে করা হয়। মিলারদের তথ্যমতে, এতে চার শতাংশ অপচয় হয়ে যায়। এই অপচয় বন্ধ হলে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। ভাবতে অবাক লাগে। আমাদের দেশে ইরি ধান বারবার ছাঁটাই করার ফলে সেই ইরি চাল আর ইরি থাকে না। ভিন্ন নামে মানুষ অধিক দাম দিয়ে ইরি চালের চিকন সংস্করণ কিনে খাচ্ছে। এ ছাড়া ঢেকি ছাঁটা চালে খাদ্যের পুষ্টিমান বেশি থাকে বলে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা ঢেকি ছাঁটা চাল খেতে মানুষকে উৎসাহিত করেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে ঢেকির ব্যবহার এখন আর নেই। সবকিছু যান্ত্রিক হয়ে গেছে। চাল একবার ছাঁটাই করলেই পুষ্টিমান যতটা থাকে বারবার ছাঁটাই করলে তা ক্রমেই কমতে থাকে। ফলে মানুষ খাদ্যের পুষ্টিগুণ হারায়। আমাদের সমাজে বিয়েশাদী কিংবা বড় কোনো অনুষ্ঠানে আপ্যায়নকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কোনো অনুষ্ঠানে কত প্রকার খাবার পরিবেশন করা হয়েছে- তা নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানে খাবারের প্রকার কিংবা উন্নত মানের না হলে নানা সমালোচনা করা হয়। আবার কোনো কোনো সময় খাবার মানসম্মত কিংবা পর্যাপ্ত না হলেও অনুষ্ঠানে নানা বিপত্তিকর ঘটনাও ঘটে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার নিয়ে সংঘর্ষ কিংবা বিয়ে ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। খাবার অনুষ্ঠানে নানা প্রকার খাবারের ভিড়ে মানুষ কোনটা খাবে আর কোনটা খাবে না তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে, মানুষ যে খাবার প্লেটে নেয় তার সব খাবার খেয়ে শেষ করতে পারে না। আবার কম বা বেশি বয়সি মানুষ নানা রকম খাবার প্লেটে নিলেও শেষে তা খেতে পারে না। ফলে প্রচুর রান্না করা খাবার উচ্ছ্বিষ্ট হয়ে যায়। এসব খাবার সংগ্রহ করে পরবর্তী সময়ে ফুটপাতে বিক্রি করতে দেখা যায়। আমাদের সাংসারিক জীবনেও খাবারের অপচয় কম হয় না। হিসাব ছাড়া রান্না করা এবং যথাসময়ে খাবার সংরক্ষণ না করার কারণে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া আমাদের দেশে ফল ও সবজির প্রচুর অপচয় হয়। যেসব ফল ও শাকসবজি যেসব এলাকায় অধিক পরিমাণ উৎপাদিত হয়, সেইসব এলাকা থেকে সঠিক সময় ও সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ না করার কারণে অনেক ফল ও সবজি গুণাগুণ হারায়। উৎপাদন পর্যায়ে সংরক্ষণাগার থাকলে উদ্ধৃত খাদ্য ও সবজি সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রয়োজনের সময় তা বাজারজাত করার মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। সে কারণে খাবার পরিবেশন ও খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের অধিক সচেতন হওয়ার পাশাপাশি খাদ্যের অপচয় রোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত