মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা অনুদান ১ লাখ বেড়ে হবে ৩ লাখ টাকা

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি হাটবাজারের ইজারার আয়ের অর্থ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসায় অনুদানের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ অর্থ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার আওতাও বেড়েছে। সংশোধিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারি হাটবাজারগুলোর ইজারালব্ধ আয়ের ৪% অর্থব্যয় নীতিমালা, ২০২২’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশোধিত নীতিমালাটি জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তার পরিমাণ ১ লাখ টাকা বেড়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সহায়তার পরিমাণ বছরে ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অর্থব্যয়ের খাতের আওতা বাড়ানো হয়েছে। আগে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘চিকিৎসা’ এবং ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত’ এ দুই খাতে অর্থ বরাদ্দের সুযোগ ছিল। নীতিমালা সংশোধন করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সংশ্লিষ্ট বিবিধ কার্যক্রম’ যুক্ত করা হয়েছে। এখন হাটবাজারের ইজারার আয়ের অর্থ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সংশ্লিষ্ট বিবিধ কার্যক্রমে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে। তবে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, উল্লিখিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয়তার নিরিখে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর অনুমোদনে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে। নীতিমালা সংশোধন করে বলা হয়েছে, বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জটিল রোগের চিকিৎসা বা মুমূর্ষু রোগীর জরুরি অপারেশন ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে বিশেষায়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা বাবদ বছরে সর্বমোট সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এ সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবরণী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। আগে এক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকার বেশি অর্থের প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করা যেত। সংশোধিত নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা মঞ্জুরির ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবার মান ও ব্যয় যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কমিটি গঠন করা যাবে। কমিটির সদস্যদের সভায় অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে পরিপত্র দিয়ে নির্ধারিত হারে সম্মানী দেওয়া যাবে। এছাড়া নীতিমালায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতালের তালিকায় ‘জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট, মিরপুর, ঢাকা’র পরিবর্তে ‘ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মিরপুর-২, ঢাকা’ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সরকারি হাটবাজারের ব্যবস্থাপনা ইজারা পদ্ধতি ও এ থেকে প্রাপ্ত আয় বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালা এবং একই বিভাগের ২০১২ সালের ৭ মে’র পরিপত্র অনুযায়ী দেশের সরকারি হাটবাজারের ইজারালব্ধ আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে এ নীতিমালাটি করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ট সন্তান এবং তাদের কারণেই আজ আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তাদের পরিবার-পরিজন যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব যার ওপর নির্ভরশীল, তিনি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় সেই পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সময় যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছেন, সেটা এই মুহূর্তে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তবে সরকার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সমান সুযোগ বিশেষ করে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার ফলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি গৌরব বোধ করে। প্রতি মাসে যখন মোবাইল ফোনে মুক্তিযোদ্ধার ভাতার ম্যাসেজ আসে তখন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বুকটা ভরে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাদের সেই অবদান যদি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা মূল্যায়ন করতে না পারি, তাহলে আমরা একটা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাব। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আজ দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে স্থান করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।