ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীতে বিজ্ঞাপন অত্যাচার

সৌন্দর্য রক্ষায় নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা
রাজধানীতে বিজ্ঞাপন অত্যাচার

রাজধানীর অলিগলি, ওভারব্রিজের পিলার, ল্যাম্প পোস্ট, বাড়ি ও অফিস ভবনের দেওয়ালসহ সর্বত্রই পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। টু-লেট, বিভিন্ন ব্যক্তির প্রচারণামূলক পোস্টার, বিজ্ঞপ্তি আর ব্যানারের ছড়াছড়ি এই ঢাকা শহরে। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোর। সুযোগ পেলেই ফ্লাইওভারের যত্রতত্র লাগানো হচ্ছে নানা ধরনের বিজ্ঞাপন। ফলে নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য। সে কারণে শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ফ্লাইওভারগুলোতে পোস্টার লাগানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে কেউ তা তোয়াক্তা করছে না। ব্যক্তি পর্যায়ের ছবি সম্মিলিত পোস্টার ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, হাসপাতাল ও দোকানের বিজ্ঞাপনী পোস্টারে সওলাব রাজধানীর সব ফ্লাইওভার। যত্রতত্র লাগানো এসব পোস্টার সরিয়ে ফেলার দাবি জানিয়ে আসছে নগরবাসী। ফ্লাইওভারের উপরে থাকা ব্যানার-পোস্টারে গাড়িচালকদের দৃষ্টি আটকালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে বলে অভিযোগ চালকদের। ফ্লাইওভারের সবখানেই রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। এসবের কারণে ফ্লাইওভারসহ শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মাঝে মাঝে ফ্লাইওভারে পরিচ্ছন্নতার কাজ করার সময় বিজ্ঞাপণগুলো তুলে ফেললেও রাতারাতি আবার ফ্লাইওভার ছেয়ে যায় বিজ্ঞাপনে। কেবল ফ্লাইওভার নয়, বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অনেক কেপিআই প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে প্রতিনিয়ত লিফলেট সাঁটানো হচ্ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীরা এরইমধ্যে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারিং করেছেন।

এছাড়া ঈদ, পুজাপার্বণ কিংবা জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে বিভিন্ন পোস্টার দেওয়ালে সাঁটানো হলেও তা আর কখনো সরানো হয় না। সেইসঙ্গে রয়েছে ব্যানারের অত্যাচার। এসব পোস্টার ব্যানার রোদ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে নিচে রাস্তার পড়ে নালা-নর্দমায় গিয়ে জমে আরেক সংকটের সৃষ্টি করে। স্কুল কমিটির নির্বাচন, ওয়াজ মাহফিল, আলোচনা সভা, কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন, বাড়িভাড়া ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রতিনিয়ত সাঁটানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে রয়েছে দেওয়াল লেখন। বিভিন্ন সংগঠনের দেয়াল লিখনে দেয়ালের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আবার কোনো কোনো পোস্টারের বক্তব্য আপত্তিকর। সাধারণত রাতের বেলা যখন এসব পোস্টার ও বিজ্ঞাপন লাগানো হয়। তখন রাস্তায় থাকে ব্যক্তিগত নৈশ প্রহরি ও পুলিশ। নৈশ প্রহরিরা পোস্টার লাগানো কিংবা দেওয়াল লিখন বন্ধ করার সাহস পাবেন না। তবে পুলিশ যেহেতু রাতের বেলা রাস্তায় থাকে এবং তারা যদি এ ধরনের কাজে বাধা দেয় তাহলে এ ধরনের অনাচার থেকে নগরবাসী রেহাই পেতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে- যারা এ ধরনের পোস্টার তাদের প্রয়োজনে ফ্লাইওভার কিংবা দেয়ালগুলোতে সাঁটায় তাদের কি সৌন্দর্যবোধ বলতে কোনো জ্ঞান নেই।

তারা কি এই নগরীর কোনো সচেতন নাগরিক নন। তাদের কি কোনো রুচিবোধ নেই। তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিছু পয়সা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিলে তো রাজধানীর সৌন্দর্য নষ্ট হতো না। তবে আশ্চার্যের ব্যাপার হচ্ছে আমরা যারা এই রাজধানী শহরের কোনো সংরক্ষিত এলাকা ভ্রমণ করি তখন আমাদের শৃঙ্খলাবোধ জেগে ওঠে। আমরা সচেতন হই। আমরা এক টুকরো কাগজও কোথাও ছুড়ে ফেলি না। তবে কেন আমরা অন্যত্র এমন অনাচরে লিপ্ত হই। সেটি ভেবে দেখা দরকার। আমরা আইনের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল নই। প্রশ্ন হচ্ছে- কেন থাকব না। ঘরে-বাইরে সর্বত্র আমাদের আইন-কানুন, বিধি-বিধান, নিয়মকানুন অনুস্মরণের পাশাপাশি শৃঙ্খল জীবনযাপন করা উচিত। তা না হলে এই রাজধানী শহর আবর্জনায় ভরে যাবে। নোংরা হয়ে যাবে আমাদের বসবাসের আশপাশের এলাকা। সভ্য জাতির তালিকায় আমাদের নাম বেশি দিন ধরে রাখতে পারব না। তাই ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, তেমনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে এই নগরীকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত