ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেন টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন

মেহজাবিন বানু, কলামিস্ট, নিরাপত্তা বিশ্লেষক
কেন টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেআর পার্কিনসন এবং নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড একই সময়ে লন্ডনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’ বইয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রমাণস্থল। বাংলাদেশ যদি তার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে পারে, তাহলে এটা উপলব্ধি করতে হবে, যে প্রতিটি জাতিই এগিয়ে যেতে পারে। ২০৩৫ সালের মধ্যে, এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসাবে পরিচিত দেশটি, বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।

অনুন্নত থেকে জাতি এখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। বাংলাদেশ আজ একটি নতুন ভূরাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সংকীর্ণ ও বিপজ্জনক পথকে বর্তমান শক্তির অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য, শুধু একজন ব্যক্তির এটি করার সাহস ছিল এবং তার লক্ষ্য গুলি উপলব্ধি করে, তিনি জাতিকে প্রবৃদ্ধির পথে চালিত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বংশধর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অখ্যাত নায়ক। ২০০৯ সালের ০৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে টানা তিন মেয়াদে তাদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে একটি উন্নয়নশীল বাংলাদেশের একটি নতুন বিবরণ লেখা হয়েছিল। বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য প্রতিকূল বেশ কয়েকটি গল্প সত্ত্বেও বাংলাদেশ অগ্রগতির জন্য আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ধাক্কা কাটিয়ে বাঘা বাঘার অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বাঘা অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। এবং পর্যবেক্ষকরা বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত বাংলাদেশকে এভাবেই রেটিং দিচ্ছেন। তাদের দাবি, শেখ হাসিনার নির্ভীক নেতৃত্ব ও কৌশলগত অবস্থানে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির চূড়ায় পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ যখন আইএমএফ তার পূর্বাভাস সংশোধন করে এবং ভারত পিছিয়ে পড়ে বিবৃতি দেয়। কৌশিক বসু বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে যে কোনো দেশের অগ্রগতি একটি স্বাগত সংবাদ। মনে রাখতে হবে, মাত্র ৫ বছর আগেও বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের জিডিপি সুবিধা ছিল ২৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসানও প্রায় একই গান গাইছেন। পাকিস্তানি সংবাদপত্র দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত ‘এইড ফ্রম বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করে বলেন, ২০ বছর আগেও এটা কল্পনাও করা যায় না যে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের দ্বিগুণ হবে।

বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক টাইটান হিসেবে আবির্ভূত হবে। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানের বিদ্যমান অবস্থার উন্নতি না হলে বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সাহায্যের জন্য ভিক্ষা করতে হতে পারে। শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা যিনি শুধু অর্থনৈতিক মুক্তি নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। প্রতিটি জায়গা স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠেছে। তিনি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে তাদের জীবন রক্ষা করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছেন। তিনি দেশের নাগরিকদের বিশ্বকে কীভাবে দেখেন এবং তার মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। রূপকল্প-২০২১-এর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পেরে অনেক সমালোচক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। সাহসী নেতা অবশ্য দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তিনি যা বলেছিলেন, তা সত্য ছিলেন। একসঙ্গে অনেক মেগা প্রকল্প মোকাবিলা করে ব্যাপক ও বহুমাত্রিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রশাসন এরই মধ্যে দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড অ্যাক্সেস বাস্তবায়ন করেছে এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে স্থাপন করেছে। ১৬ কোটি মানুষ এখন ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করছেন। তারা এখন প্রায়শই যোগাযোগ কেন্দ্র পরিষেবাদির জন্য ৯৯৯ নম্বর, সাধারণ তথ্যের জন্য ৩৩৩, কৃষক বন্ধু পরিষেবা, টেলিমেডিসিন পরিষেবা এবং সমন্বিত শিক্ষার জন্য ৩৩৩১ নম্বর ব্যবহার করে। তিনি পুরো জাতিকে কভার করার জন্য একটি ডিজিটাল শীট ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধির পথে নতুন ফোকাস। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশের ডিজিটালাইজেশনের ১৪ বছর পূর্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ কীভাবে ২১ থেকে ৪১-এ বিকশিত হবে, তার অবকাঠামো অনুযায়ী সবস্তরের ব্যক্তিদের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তিপ্রেমী হবে। স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট নাগরিক। অন্য কথায়, আমরা অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করব। আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সক্রিয় সরকারি পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি ওটা অনুসরণ করব। সামগ্রিকভাবে আমরা একটি স্মার্ট সমাজ গড়ে তুলব।

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সরকারের নতুন লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে এটুআই সারা বছর বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজতর করার জন্য বেশ কয়েকটি ডিজিটাল প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে সরকার ‘রূপকল্প ২০৪১’ অনুযায়ী জ্ঞান ও উদ্ভাবনভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করেছে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিক, পরিবেশবান্ধব, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সৃজনশীল। স্মার্ট সিটি এবং স্মার্ট ভিলেজ গ্রহণের ফলে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটি, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।

করোনা থেকে শুরু করে ইউক্রেনের সংঘাত পর্যন্ত বেশ কিছু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রভাবিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর জন্য ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় জাতীয় মুদ্রাস্ফীতি এবং রপ্তানির জন্য বাজার অস্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ যথাযথব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবিলা করেছে। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কম।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রাবন্দর এবং মোংলাবন্দরের আধুনিকায়ন শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বকে সম্মানিত করে এমন কয়েকটি চমৎকার প্রকল্প মাত্র। প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশকে বর্তমানে ‘এশিয়ান টাইগার’ বলা হয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার সংঘাত, বৈশ্বিক মুদ্রা সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে বাংলাদেশে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন। দেশের বন্দরগুলো কয়লা বোঝাই জাহাজ পেয়েছে। সুবিধাগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে।

শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের শাসনকাল ছিল চমৎকার। দেশের জন্য একটি সুবিধা। সোনার বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামে অভিহিত এই ঝুড়ি এখন বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ।

‘ক্যারিশম্যাটিক নেত্রী’ শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই বিস্ময়কর অগ্রগতির কৃতিত্ব পেয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত