ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

সচেতনতার বিকল্প নেই
অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

রাজধানীর সর্বত্র রয়েছে, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য। প্রতিনিয়ত রেল-লঞ্চ ও বাসস্টেশন এলাকায় এদের তৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। বেশির ভাগ সময় পরিবহনের মধ্যেই তারা অন্যযাত্রীদের টার্গেট করে। কোনো ব্যক্তি কত টাকা নিয়ে তার গন্তব্যে যাচ্ছে, সেই খবর তারা আগেভাগে সংগ্রহ করে যাত্রীর চলাফেরা ও তার পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে তার আশপাশে সিট নেয়। পরে সময় সুযোগ বুঝে তারা সহযাত্রীর টাকা-পয়সা ও দামি মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দেয়। যে কোনো পরিবহনের মধ্যে অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটি মাইকিং করলেও যাত্রীরা তা আমলে নিচ্ছে না। তারা সাময়িক সময়ের জন্য সচেতন ও সতর্ক হলেও পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যাত্রীদেরই বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অত্যন্ত ধুরন্দর ও কূটকৌশলী। তাদের কবলে পড়ার পর দয়াপরশ হয়ে কেউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তো কপাল ভালো। আর যদি কেউ হাসপাতালে নিয়ে না যায়, তাহলে সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

এমনকি মারাও যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা যানবাহন থেকে নেমে যাওয়ার পর সিটে অজ্ঞান অবস্থায় পড়া থাকা যাত্রী পরিবহন স্টাফদের নজরে আসে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করলেও তাদেরও করার কিছু থাকে না। তারা বড়জোর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যদর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার করলেও তারা কয়েকদিন কারাবাস করে আবার রেব হয়ে আসে এবং পুরোনো কাজে যোগ দেয় নতুন কোনো কৌশলে। রাজধানীর প্রায় সব স্থানে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও তাদের আনাগোনা বেশি থাকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তাদের প্রয়োগ করা নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ছেন যাত্রীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের মাঝেমধ্যে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ গ্রেপ্তার করলে আবার কয়েকদিন পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে যারা আসেন, তারা পরিবারের জন্য মোবাইল ফোন, গয়না ও ঘড়িসহ মূল্যবান উপহার-সামগ্রী নিয়ে আসেন। এছাড়া প্রবাসীদের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা ও দামি জিনিসপত্র থাকে। বিদেশফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশধারী মূলত অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শিকার ধরতে ঘুরে বেড়ায়। বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকায় তাদের আনাগোনা বেশি। সেসব যাত্রী একা একা গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফেরেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদেরই টার্গেট করে থাকে এই চক্রটি।

বিদেশফেরত যাত্রীদের সঙ্গে প্রথমে গোশগল্পে মেতে ওঠে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। তারপর নানা ধরনের কথা বলে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধু হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে বিদেশফেরত যাত্রী যে এলাকায় যাবেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও ওই একই এলাকায় যাবার কথা বলে। এভাবে বিদেশফেরত যাত্রীর সঙ্গে অল্প সময়ে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করে তোলে প্রতারক চক্র। দুজনে একইসঙ্গে গেলে নিরাপদে যেতে পারবেন, একসঙ্গে গাড়ি ভাড়া করলে খরচ কম হবে, সময়ও কাটবে। বিদেশফেরত ব্যক্তিকে এমন প্রস্তাব দেয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর শুরু হয়ে যায় ছদ্মবেশী এই চক্রের আসল তৎপরতা। কখনও গাড়িতে ওঠার আগে, কখন গাড়িতে ওঠার পর জুস, পানি কিংবা কোমল পানীয় খেতে দেয় তারা। আর তা খেয়ে বিদেশফেরত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে মালামাল লুটে নিয়ে কেটে পড়ে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। আবার কখনও কখনও বিদেশফেরত যাত্রীর স্ত্রী-বোন বা ভাইয়ের জন্য ফারফিউম উপহার দেয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। ‘ঘ্রাণ পছন্দ হয়েছে কিনা দেখেন, না হলে আরেকটা দেব, এখনই চেক করেন’, বলে চক্রের সদস্যরা। গন্ধ শুকতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন বিদেশফেরত যাত্রী। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক মলম এবং অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজে নামে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে স্টেশন এলাকায় প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। যাত্রাপথে আশপাশের লোকজনের গতিবিধি নজরে রাখতে হবে। সর্বোপরি অপরিচিত কারো কোনো খাবার কোনোভাবেই গ্রহণ করা যাবে না। নিজের বিপদের কথা চিন্তা করে নিজের সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত