ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্মার্ট বাংলাদেশের শিক্ষকরা কেমন হবেন

ড. সৈয়দ নাজমুল হুদা, সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
স্মার্ট বাংলাদেশের শিক্ষকরা কেমন হবেন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে সম্মানজনক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করার জন্য, অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম, ত্যাগ, কারাবরণ ও নির্যাতন ভোগ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই আজ আর।

স্মার্ট বাংলাদেশ এ দেশের প্রায় অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের ধ্যানজ্ঞান ও চিন্তাভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সফলতা অর্জনের জন্য সমাজের সব শ্রেণি পেশার অংশগ্রহণ অনস্বীকার্য। এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে এদেশের শিক্ষকরা। স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে সবার আগে প্রতিটি নাগরিককে হতে হবে স্মার্ট। হতে হবে মানবতা ও মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ। মনুষ্যত্বের শিক্ষায় হতে হবে উজ্জীবিত। এরই মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় আসছে যথেষ্ট পরিবর্তন। প্রতিটি কর্মকাণ্ডে নাগরিকের প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকতে হবে। আর এই জ্ঞান বিতরণে শিক্ষককে হতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের অধিকারী। শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘যিনি সৎ, তিনি স্মার্ট। যিনি অসাম্প্রদায়িক, তিনি স্মার্ট। যিনি সহমর্মী, তিনি স্মার্ট। যিনি কর্মদক্ষ, তিনি স্মার্ট। তাই দক্ষ, যোগ্য ও সৃজনশীল মানুষই হবে আমাদের স্মার্ট নাগরিক। কাজেই এই স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হলে সবার আগে শিক্ষকদের স্মার্ট হতে হবে। আর সেই শিক্ষকরাই হবেন আমাদের স্মার্ট নাগরিক তৈরির মূল হাতিয়ার।’ জন অ্যাডামস শিক্ষক সম্পর্কে বলেছেন, ‘শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার।’ ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছেন, ‘শিক্ষকের চরিত্রে, কথায় ও কাজে কোনো পার্থক্য থাকবে না।’ এরিস্টটল শিক্ষক সম্পর্কে বলেছেন, ‘যিনি জানেন, তিনি করেন, যিনি বোঝেন, তিনি পড়ান’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শিক্ষককে নিয়ে নিজের চেয়ারে বসিয়ে উপস্থিত মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গর্বভরে বলেন, ‘আমার শিক্ষক।’

১৯৫২ সালে ইসরাইলের প্রথম প্রেসিডেন্ট ওয়াইজম্যানের মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকতাকেই জীবনের ব্রত হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। একজন শিক্ষার্থীর মাঝে নতুন নতুন জ্ঞান বিতরণ, স্বপ্ন দেখানো ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা রাখেন একজন শিক্ষক। শিক্ষক শুধু পাঠ্যবইয়ের ভিতরেই নয় এর বাইরেও সত্য, ন্যায়-অন্যায় ও সুশাসনের বিষয়ে শিক্ষার্থীর মনে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেন। একজন শিক্ষক যত দক্ষ হবেন, যতই স্মার্ট হবেন, তার শিক্ষার্থীও সেই সব গুণ ধারণ করবেন। শিক্ষাব্যবস্থায় ২০২৫ সাল নাগাদ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হবে। শিক্ষার্থী আনন্দের মধ্য দিয়ে শিখবে, লিখবে এবং আত্মস্থ করবে।

জাপানি একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে, ১ হাজার দিনের পরিশ্রমী অধ্যয়নের চেয়ে একদিন একজন শিক্ষকের কাছে অধ্যয়ন করা অধিক শ্রেয়। একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে ও তাদের সঠিকভাবে পরিচালনের প্রতিটি পদক্ষেপে শিক্ষকের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি- এই চারটি মৌলিক স্তম্ভের সঙ্গেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে শিক্ষকরা জড়িত।

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে স্মার্ট সিটিজেন বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে আমাদের শিক্ষকরা। সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে, স্মার্ট ইকোনমিতে ভূমিকা রাখবে শিক্ষকরা। গ্রামকেন্দ্রিক অর্থনীতি গড়ে উঠবে।

স্মার্ট বাংলাদেশে নাগরিকরা যে অঞ্চলেই বসবাস করুক না কেন, সব অঞ্চলেই সমতারভিত্তিতে সব নাগরিক সমসুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। গ্রাম আর শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের নাগরিকরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে. একটি গ্রামের নাগরিকও সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব ব্যবস্থা চালু হবে। এতে করে পরনির্ভরশীলতা কমবে। কমবে দুর্নীতিও। অর্থনীতির গতিশীলতা ফিরে আসবে। মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কিংবা কাউকে ভুল তথ্য প্রদান করে সুযোগ গ্রহণের সুবিধা কমে যাবে। প্রযুক্তিনির্ভর একটি নির্ভুল ডাটাবেজ এর মাধ্যমে এই বৃহৎ কাজটি করতে যথেষ্ট সময় ও দক্ষতার প্রয়োজন। এই কাজটি অনেকটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাইবার সিকিউরিটিতে দক্ষতার প্রয়োজন আছে আমাদের জনগোষ্ঠীর। সর্বোপরি এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট বাংলাদেশের ডাটাবেজে সংযুক্ত করতে প্রয়োজন স্মার্ট কর্মীবাহিনী। এই কর্মীবাহিনী আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা। তাদের যথাপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে আমাদের দক্ষ শিক্ষকেরাই তৈরি করবে। শিক্ষকদের জন্য পৃথিবীর অনেক দেশে আলাদা বেতন কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করা হয়। শিক্ষকতা শুধুই একটি পেশা নয়, এটা একটি ব্রত। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করা হয়। দেশের সংকটে শিক্ষকদের কাজে লাগানো হয়। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এর যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। শিক্ষকদের মর্যাদা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কর্মের পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য হলে আগামি দিনে শিক্ষকতায় মেধাবীদের অংশগ্রহণ কমবে। শিক্ষার সুন্দর পরিবেশসহ শিক্ষার মান ও হার উভয়ই বেড়েছে। এই জায়গাটি আরো গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়লে দেশ গভীর সংকটে পড়বে। প্রযুক্তিনির্ভর এই ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করতে শুধু আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

লেখক : শিক্ষক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত