ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হোক

এস এম খান
কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হোক

শৈশব ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে দ্রুত ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়কালই কৈশোর হিসেবে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সময় হলো কৈশোরকাল। এ সময় ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে, যে কারণে তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়। বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া গেলে ছেলেমেয়েরা দারিদ্র্য, বৈষম্য ও সহিংসতার চক্র ভেঙে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। কারণ কৈশোরের শিক্ষা, জ্ঞান ও অভ্যাস তার পরবর্তী জীবনের ওপর অনেকখানি প্রভাব ফেলে। কাজেই জীবনকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে কিশোর-কিশোরীদের যেমন সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তেমনি পরিবার ও সমাজকেও তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।

বলা সঙ্গত, ছেলেমেয়ে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি থাকে। প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে কাউন্সেলিংয়ের মতো বিষয়ে তারা অবগত নন। দেশে বয়ঃসন্ধিকালের তিনজন মেয়ের মধ্যে একজনই রুগ্ণ। আর মেয়েদের ১১ শতাংশই অনেক বেশি রোগা-পাতলা। তার অধিকাংশেরই জিংক, আয়োডিন ও আয়রনের ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে কিশোরী মেয়েদের অপুষ্টির পেছনে মূলত দায়ী দুটো কারণ পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না পাওয়া ও অল্প বয়সে গর্ভধারণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০১৮) সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ৭৭ লাখ কিশোর-কিশোরী। কৈশোরকালে মন ও দেহের যে বৃদ্ধি ঘটে, সেই পরিবর্তনের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো শিশু-কিশোরদের মনোদৈহিক ও মনো-সামাজিক, আবেগীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। একই সঙ্গে এই বয়সটা তাদের জন্য খুব সম্ভাবনার সময়। তাই এ সময় থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষার প্রয়োজন। তারা প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানলে সুষ্ঠুভাবে তারা নিজেদের যত্ন নিতে পারবে এবং এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সুস্থ-সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে। একটি জাতির ভবিষ্যৎ সে দেশের শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবার মানদণ্ড সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সামাজিক নানা রকম সংকোচ এবং দ্বিধার কারণে বিষয়গুলো সেভাবে আলোচিত হয় না। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হতে হয় কিশোরীদের, যারা আমাদের মেয়ে ও ভবিষ্যতের গর্ভধারিণী মা এবং পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। গত সোমবার রাজধানীতে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নগরীর কিশোর-কিশোরী ও মায়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক পলিসি কনফারেন্স’-এ প্রধান অতিথির বক্তৃৃতায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের যে মানদণ্ডগুলো আগে অবহেলিত ছিল তা এখন আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে পারছি। তার পরও আমাদের সমাজে কিশোরী, অবিবাহিত মেয়ে ও নারীদের যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি এখনো কিছুটা উপেক্ষিত।

এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলামে অন্তর্ভুক্তিসহ বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রয়েছে।বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে অবস্থানে নিয়ে যেতে চান সেখানে আমাদের শিশু, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। যে কারণে ‘জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি, ২০২০’ যুগোপযুগী করে প্রণয়ন করা হয়, যেখানে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কিশোর-কিশোরীদের সার্বিক কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য কৌশলপত্র বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজন এখন আমাদের সবার ব্যক্তিপর্যায় থেকে সহযোগিতা করা- সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। গণমাধ্যম ও শিক্ষকদেরও এ ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রয়েছে, যা উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত