শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কাছেই জনগণের সব প্রত্যাশা

হীরেন পণ্ডিত

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছেই জনগণের সব প্রত্যাশা। এর মূল কারণ, এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক চর্চার বহিঃপ্রকাশ। এই দলটি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে। এই দল জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে। অনেক উন্নয়ন উপহার দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বেশি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং সরকার করোনা মহামারিকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সামাল দিয়েছে। এছাড়া আরো অনেক ইতিবাচক অর্জনও রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি রয়েছে। আসলে মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই। তবে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অন্য যে কোনো দলের চেয়েই বেশি। জনগণ মানবিক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার এবং দেশ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাছে প্রত্যাশা করে। আসলে প্রত্যাশা বেশি হলে, হতাশার কিছু কথা থাকে। হতাশা ঘটে যখন প্রত্যাশা এবং অর্জনের মধ্যে ব্যবধান থাকে। হতাশা কাটিয়ে উঠতে সবাইকে অবশ্যই মানুষের প্রত্যাশার কাছাকাছি থাকতে হবে। ১৫ বছর ক্ষমতার মধ্যে থেকে দলের অনেক নেতাই তৃণমূল কর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। আবার অনেকের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা অপবাদ, অপপ্রচার। অপপ্রচারের ডামাডোলের মধ্যে আওয়ামী লীগের বেরিয়ে আসা। কীভাবে বা নতুন নেতৃত্ব কী ভাবছেন, তা নিয়ে আলোচনা বিস্তর, এ নিয়ে কৌতূহলও কম নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৪২ বছর এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নানাবিধ সংকট ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে সংগঠিত করেছেন, ক্ষমতায় এনেছেন। শুধু দলই নয়, সারাদেশ ও দেশের মানুষকে তিনি জানেন এবং সবাইকে বুঝতে চেষ্টা করেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের রয়েছে তার ওপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। সভাপতি শেখ হাসিনা দলের হাল ধরে আছেন। তিনি দলে থাকবেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা এটাই। আমরা বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির কথা শুনি। আর্থিক অনিয়ম দূর করতে আওয়ামী লীগকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আরো মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে দাঁড়ানো, গণতান্ত্রিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা এবং গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার বিশেষ করে এই তিনটি ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যাশা থেকে একটু দূরে।

মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই স্থান পূরণ করতে হবে এবং এটাও সম্ভব নয় যে, অন্য দল এসে সব রাতারাতি পরিবর্তন করবে। তবে, প্রত্যাশা এবং অর্জনের মধ্যে ব্যবধান রয়ে গেছে। এটা সামাজিক এবং মানবিক মর্যাদা সম্পর্কে; এটা নির্বাচন সম্পর্কে সরকার এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। জনগণের প্রত্যাশা সরকার পূরণ করবে এবং এই সমস্যাগুলো দূর করতে সচেষ্ট হবে। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে সুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী জনগণের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আবার অনেকে পরামর্শ দেন বরেন এই দূরত্ব দূর করতে হবে। অনেকে অভিযোগ বা আক্ষেপ করেন, এই বলে যে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ যতটা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, তার চেয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ দূরে সরে গেছে। ত্যাগী নেতারা ব্যাকফুটে রয়েছেন। এখন আধিপত্য রয়েছে ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা ও নব্য আওয়ামী লীগারদের হাতে। তবে এগুলোতে অনেকের আক্ষেপ থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখেই এবং বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে সব কিছু বিচার করতে হবে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এবং যারা রাষ্ট্রের প্রশাসনে ভূমিকা রাখায় অভিজ্ঞতা নিয়ে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত আছেন, এটা দেশ পরিচালনায় জন্য একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, তা হলফ করেই বলা যায়। তবে এই বিভিন্ন প্রবণতাগুলোর সমন্বয় করতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য আওয়ামী লীগের জন্য ভালো হবে এবং জনসেবায় আওয়ামী লীগ আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার কম দামে পণ্য সরবরাহের চেষ্টা করছে; এটা ইতিবাচক। কিন্তু যখন আপনি এই ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইন দেখতে পাবেন, তখন এর পরিস্থিতিকে আরো গভীরভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজ করলে সমালোচনা আসবে, ষড়যন্ত্র থাকবে, কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে।’ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করব। আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে রাখা ছিল, যা আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য তাদের বাজেট থেকে সরাসরি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরে সম্প্রতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি চারবারের প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবারের দুর্নীতি করার প্রয়োজন নেই। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি। আমি মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি, আমরা দিতে এসেছি, নিতে নয়। সব সমস্যা কাটিয়ে আজ আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে বাধা ছিল, করোনা মহামারি, তারপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা নিষেধাজ্ঞা চাই না, আমরা শান্তি চাই। সব দেশ স্বাধীন। তাদের স্বাধীনভাবে চলার অধিকার আছে। সব দেশেরই এই অধিকার থাকা উচিত। যুদ্ধ মানুষের ক্ষতি করে, আমরা যুদ্ধের ভয়াবহতা জানি। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে, তখন দেশ উন্নত মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। কারণ, এটাই আওয়ামী লীগ এবং এটাই আওয়ামী লীগের শিক্ষা।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তিন মেয়াদে ১৫ বছর পূর্ণ করেছে। এ সময়ে সরকারের সাফল্য ও অর্জনও কম নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। সরকার বিরোধীরা দেশে গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে ক্রমাগত অভিযোগ করে আসছে। অন্যদিকে দেশের অভাবনীয় উন্নয়নে কোনো প্রশ্ন নেই। বৈশ্বিক সংকটকালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং দেশকে খুব ভালোভাবে পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ সরকার।