ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু

কর্তৃপক্ষকে হতে হবে দায়িত্বশীল
বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু

রাজধানীর মিরপুরে বিদ্যুতায়িত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছেন। মিরপুর মডেল থানার সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা হাজী রোডের ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের রাস্তার ওপর এ ঘটনা ঘটে। প্রবল বৃষ্টিতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় বজ্রপাত হলে বৈদ্যুতিক ক্যাবল ছিঁড়ে জমে থাকা পানিতে পড়ে। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে পাঁচজন গুরুতর আহত হন। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠালে চারজন মারা যান।

বৈদ্যুতিক ক্যাবল ছিঁড়ে নিচে পড়ার কারণে এই মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হতে থাকে। এ বৃষ্টিপাত কোনো কোনো এলাকায় রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হয়। ফলে হাজী রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বৈদ্যুতিক ক্যাবল ছিঁড়ে পড়ে। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে চারজন মারা যান। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দিনের বিভিন্ন সময় বৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে একটানা বৃষ্টি হতে থাকে। ভারি বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অনেক এলাকায় পানি জমে যায়। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। রাত পৌনে ১০টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা এ সড়কে সব গাড়ি থেমে ছিল। কিছু গাড়ি বিকল হয়ে যায়। এতে যানজট আরো দীর্ঘ হয়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপের কারণে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টি রাজধানীবাসীর জন্য প্রচণ্ড দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। অফিসফেরত অনেক মানুষ রাস্তার যানজট ও জলজটে আটকা পড়ে। সামান্য একটু বৃষ্টিতে রাজধানীর রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দীর্ঘক্ষণ থাকবে, এটা কারো কাম্য নয়। মূলত রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমন করে গড়ে তোলা দরকার, যাতে করে বৃষ্টির পানি অতি অল্প সময়ের মধ্যে সরে যেতে পারে। পানি কীভাবে অন্যত্র সরে যাবে, সেই সুব্যবস্থা নেই। রাজধানীর খালগুলোর অস্তিত্ব কোথায়, তা দেখে বোঝা যায় না। নালা-নদর্মা ভরে গেছে ময়লা-আবর্জনায়। পানি দ্রুত নামতে পারছে না। ঢাকার আশপাশের যে কয়েকটি নদী আছে, সেগুলোর তলদেশ ময়লা-অবর্জনায় ভরে গিয়ে নদীতে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে নদী বৃষ্টির পানি ধারণ করতে পারছে না। ফলে জলজটের ভোগান্তি থেকে সহজেই নিষ্কৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এদিকে অরক্ষিত বিদ্যুতের ক্যাবলে জড়িয়ে মানুষের মৃত্যুও কাম্য নয়। জলজটের ভোগান্তি সহ্য করা যায়। কিন্তু পানিতে বিদ্যুতের তার খুলে পড়ায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মানুষের মৃত্য সহ্য করার মতো নয়। একই পরিবারের তিনজন সদস্যের এভাবে মৃত্যুর দায় বিদ্যুৎ বিভাগ নেবে কি না, সেটা একটি প্রশ্ন। বিদ্যুতায়িত হয়ে অকালে তিনজন মানুষের মৃত্যুতে ওই পরিবারে যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, সেজন্য বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, এতটুকু সহমর্মিতা জানিয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে আশা থাকবে পয়ঃনিষ্কাশন ও বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আরো দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত