পণ্যের সরকারি দাম নির্ধারণ

অকার্যকর সিদ্ধান্তে বেড়েছে ভোগান্তি

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

খাদ্যদ্রব্যের বাইরে অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মানুষ এমনিতেই ফতুর হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে চিকিৎসা ব্যয় এমনভাবে বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষ তা সহজে ধারণ করতে পারছে না। সাধারণ রোগবালাইয়ের চিকিৎসা করতে গেলে চিকিৎসক যেভাবে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন, তাতে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা নিজেদের কমিশনের পরিমাণ বাড়ানোর কারণে-অকারণে পরীক্ষা করতে দেন। আগের দিনে চিকিৎসকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম উল্লেখ করে দিলেও সমালোচনামুখে এখন আর দেন না। তবে পরীক্ষার রিপোর্টে চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসকের নাম উল্লেখ থাকায় তাদের কমিশন যথাসময়ে পৌঁছে যায়। অনেকের ধারণা, চিকিৎসাসেবায় ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলে চিকিৎসা খরচ অনেক কম হতো। মানুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভয়েই অনেক সময় ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় না। এদিকে শিক্ষা খাতের ব্যয়ও সাধারণ মানুষ বহন করতে পারছে না। গৃহশিক্ষকের বেতন ও কোচিংয়ে ফি দিতে গিয়ে অভিভাবকরা হিমশিম খাচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে শিক্ষা উপকরণের দাম। চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যয় বহন করতে যেখানে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে সুষম খাদ্যের চাহিদা পূরণ করবে কীভাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ প্রতিদিন বাজার করা ছেড়ে দিয়েছে। সংসার পরিচালনায় অন্যান্য খরচ বাঁচাতে গিয়ে খাদ্যদ্রব্য কিনতে গিয়ে মানুষ হাত গুটিয়ে ফেলছে। বাধ্য হয়ে তারা ডিম ও আলুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। অথচ এই দুটি নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। আলু, পেঁয়াজ ও ডিম এই তিনটি পণ্যের দাম ক্রয়সীমার মধ্যে থাকলে মানুষ কোনো রকমে সংসার চালানোর সংগ্রামে অংশ নিতে পারত। তবে রাজার সিন্ডিকেটের কারণে এই তিনটি পণ্যের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়। গণমাধ্যমে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে বিভিন্ন আঙিকে প্রতিবেদন প্রচার করার ফলে বাণিজ্যমন্ত্রীর টনক নড়ে এবং সরকারও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। নির্ধারণ করে দেয়া হয়- এই তিনটি পণ্যের দাম। তবে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, ভোক্তা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাহলে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ের দাম কীভাবে নির্ধারিত হবে, তার কোনো উল্লেখ নেই। উৎপাদন খরচের সঙ্গে তালমিল করে উৎপাদন পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দিলে চাষি লাভবান হবে। আবার পাইকারি পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর খরচ বিবেচনায় নিয়ে ভোক্তাপর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিলে সেটি টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথচ উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে দাম নির্ধারণ না করে ভোক্তা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর সেই ঘটনাই ঘটেছে- আলু, ডিম ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণে ক্ষেত্রে। সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম ভোক্তা পর্যায়ে নির্ধারণ করে দিয়েছিল গত ১৪ সেপ্টেম্বর। সে সময় আলুর খুচরা দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ও পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে কেটে গেছে, অন্তত ১০ দিন। বেঁধে দেওয়া দাম এখনো কার্যকর হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে আলু-পেঁয়াজের সংকট দেখা গেছে খুচরা বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। প্রতি হালি ডিম ৫০ টাকা। আর এলাকার পাড়া-মহল্লায় ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। এছাড়া রাজধানীর বাইরেও একই চিত্র বিরাজ করছে। একদিকে পণ্যের দাম বৃদ্ধি অপর দিকে সরবরাহে সংকট। কোনো দিকে যাবে মানুষ। সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করার জন্য ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালায় খুচরা পর্যায়ে। জরিমানা করা হয় খুচরা ব্যবসায়ীদের। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে অনেককে অভিযানের সময় কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। অভিযানের ভয়ে পাইকারি বাজারে অনেকে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে। সরকার আলু ডিম ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিলেও পাইকারিতে বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। সে জন্য দামও কমছে না। খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর হিমাগার এবং পেঁয়াজের বড় আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হলে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং তখন দামও স্বাভাবিক হবে। অন্যথায় মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।