সাপে কাটা ওষুধ সংরক্ষণ

নিশ্চিত করতে হবে প্রাপ্তি ও প্রয়োগ কৌশল

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র পানি জমে যায়। আবাসস্থল হারিয়ে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে বিষধর সাপ। আর সে কারণে বর্ষাকালে বিষধর সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। এক সময় গ্রামে কাউকে সাপে কাটলে ক্ষতস্থানের উপরে কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ওঝা কিংবা কবিরাজের সন্ধানে স্বজনরা ছুটতেন। তাদের ধারণা ছিল সাপে কাটা রোগীর কোনো আধুনিক চিকিৎসা নেই। তাই কবিরাজি চিকিৎসার ওপর নির্ভর করতে গিয়ে সাপে কাটা রোগী মৃত্যুর মুখে পতিত হতো। সাপে কাটার ঘটনাগুলোর ৯৫ ভাগই ঘটে গ্রামাঞ্চলে। অথচ সাপে কাটা ওষুধ অ্যান্টিভেনমের বেশিরভাগ সরবরাহ করা হচ্ছে শহরের হাসপাতালে। সেগুলোর অনেকগুলোই অব্যবহৃত অবস্থায় অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। আর উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সাপে কাটা ওষুধ অ্যান্টিভেনম না থাকায় রোগীকে যেতে হচ্ছে শহরে। এতে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপে কাটার পর দ্রুততম সময়ে অ্যান্টিভেনম দেওয়া নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ে এর সরবরাহ করা আবশ্যক। চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে বছরে প্রতি লাখে ২৪৪ জন মানুষ বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হন। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচজন মারা যান। সে হিসাবে প্রতি বছর ৪ লাখের বেশি মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে মারা যাচ্ছেন অন্তত ৭ হাজার ৫১১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সাপের কামড়ের শিকার এসব মানুষের ৯৫ ভাগই গ্রামের বাসিন্দা। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাপ কামড়ালে তিনভাবে বিষ মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে। রক্তকে দূষিত, মাংসপেশীকে অকার্যকর এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে বিষধর সাপ কামড়ালে রোগীকে বাঁচাতে হলে শরীরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে সব হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় না। তাই রোগীদের উপজেলা বা জেলা শহরের হাসপাতাল ঘুরে বিভাগীয় শহর বা রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়। ততক্ষণে অনেক রোগী স্ট্রোক বা পক্ষঘাতে আক্রান্ত হয়। আবার অ্যান্টিভেনম সহজলভ্য না হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের বড় অংশ রোগীই ওঝা বা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ে। সাপে কাটা রোগীদের স্বজনরা বলছেন, কাছাকাছি অ্যান্টিভেনম না থাকায় বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনদের ছুটতে হয় ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরে। সেখানে পৌঁছাতে এতটা দেরি হয়ে যায় যে, শেষ পর্যন্ত সাপের কামড়ে আহত অনেককে বাঁচানো যায় না।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে সারা দেশের ৮০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয়, জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়েছে। তখন ৪১ হাজার ৪৭০ ডোজ প্রতিষেধক সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যেই যেসব অ্যান্টিভেনম এখনও অব্যবহৃত আছে, সেগুলোর মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। উপজেলা সদরে অ্যান্টিভেনম না পাওয়া প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, উপজেলা ও জেলা সদরে অনেক সময় অ্যান্টিভেনম থাকলেও সেখানকার চিকিৎসকরা জটিলতার ভয়ে তা দেন না। তারা জানান, সাপে কাটা রোগীকে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন অনেকের তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এমন রোগীকে সামাল দিতে আইসিইউর দরকার হয়। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে তো সেই সুযোগ নেই, তাই সাপে কাটা রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দূরের কোনো হাসপাতালে রোগী পাঠালে সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর জীবন-মুত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। সে জন্য সাপে কাটা ওষুধের সরবরাহ ও এই ওষুধের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে চিকিৎসকদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।