ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ

পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী জ্বালানি
নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেছে। কমে গেছে চাহিদার তুলনায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ। বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে পরিবহণ ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। আর তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। গ্রাহককে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি তেলের ব্যবহার সীমিত করা না হলে আগামীতে কঠিন সময় আসতে পারে। এজন্য তারা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতি নজর দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। সরকারও নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করছে। আশার কথা হচ্ছে দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট। যার মধ্যে সোলার পার্ক থেকে আসে ৪৬১ মেগাওয়াট এবং সোলার রুফটপ থেকে আসে প্রায় ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বর্তমানে এক হাজার ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সোলার পার্ক নির্মাণাধীন। এছাড়া নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পগুলোর কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সমন্বিত পরিকল্পনা করতে পারলে সোলার প্রকল্পের কার্যকর বিকাশ সম্ভব। বাংলাদেশেও সৌরশক্তির বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সৌরশক্তিকে সারা বিশ্বেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সঠিক নীতি ও প্রবিধান দ্বারা সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা গেলে সৌর প্রকল্পগুলোর সম্প্রসারণ দ্রুত সম্ভব। সৌরশক্তি বিকাশে ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সকে (আইএসএ) উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রবর্তন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে। দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গী ও সদস্যদের চাহিদা বিবেচনা করে কর্মসূচি গ্রহণ করলে আইএসএ সৌর বিদ্যুৎ প্রসারে কার্যকরী অবদান রাখতে পারবে। এদিকে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ। গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর জন্যই মূলত এই উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই উৎপাদনের অর্ধেক অর্থাৎ ২ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট আসবে সৌরশক্তি থেকে। ২০০ দেশ ২০১৫ সালে ‘প্যারিস চুক্তি’ সই করেছিল। সেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে শিল্প বিপ্লবের আগের পর্যায়ে, অর্থাৎ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে তাপমাত্রাকে ১ দশমিক ৫ সেলসিয়াসের মধ্যে নিয়ে আসার ব্যাপারেও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ১ শতাংশেরও কম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে জলবায়ু বিপর্যয় ঘটার সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ঝুঁকিতে আছে এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং এই উচ্চতা বাড়ার পেছনে মূলত গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণই দায়ী। বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে কয়লা, গ্যাস ও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম এবং নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ। ২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না হলেও নতুন পরিকল্পনাগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ যদি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে, তাহলে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। সে সময় উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ করে ৪৬ হাজার মেগাওয়াট করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এরইমধ্যে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ এবং চাহিদা পূরণে বিদ্যুতের নবায়নযোগ্য উৎস হতে পারে সহায়ক জ্বালানি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত