ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতির স্বর্ণমুকুট জননেত্রী শেখ হাসিনা

আরিফ আনজুম
জাতির স্বর্ণমুকুট জননেত্রী শেখ হাসিনা

শুধুমাত্র উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, আজ এ যেন সারাবিশ্বে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শেখ হাসিনা। একটি দেশের সফল রূপকার, একজন সংগ্রামী রাজনৈতিক নেত্রী, একজন সাহসী যোদ্ধা, বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তির আলোকবর্তিকা, একজন মমতাময়ী মানবিক নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বীর সাহসী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গর্বিত সন্তান।

১৯৪৭ সালের আজকের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত এক পল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। বঞ্চিত বাঙালির একমাত্র আশ্রয়স্থল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতাকাবাহী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবনের ঝড়ো বসন্ত পেরিয়ে আজ আর এক নতুন বসন্তে পা দিলেন তিনি। ডিজিটাল ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা এ নেত্রী।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন শেখ হাসিনা এবং পিতার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ যাত্রায় অনেক বন্ধুর পথ তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনীতিকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেই রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসনে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। মায়ের সঙ্গে জেলখানায় পিতাকে দেখতে যেতে যেতে এক কঠিন সংগ্রামী ও দৃঢ়চেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তিনিও কারাভোগ করেছেন, একাধিকবার গৃহবন্দি ছিলেন। চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। তিনি প্রায় তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নিভে গিয়েছিল সম্ভাবনার অনন্ত দুয়ার। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু রেখে গেছেন তার যোগ্য উত্তরসূরি। ১৯৭৫-এর সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। কিন্তু ঘাতকদের ষড়যন্ত্র আর অনিরাপত্তার কারণে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও দীর্ঘ ৬ বছর দেশে ফিরতে পারেননি তারা।

দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দলের দায়িত্বভার গ্রহণের পরই শুরু হয় শেখ হাসিনার ৪১ বছরের ক্লান্তিহীন পথযাত্রা। এ যাত্রাপথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। গত ৪১ বছরে কমপক্ষে ২০ বার তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। হত্যাচেষ্টা থেকে বাঁচলেও স্বৈরাচারী শাসকদের জেল-জুলুম-অত্যাচারের হাত থেকে তিনি রক্ষা পাননি। তাকে কয়েকবার কারাবরণ এবং দীর্ঘ কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। মোকাবিলা করতে হয় অসংখ্য মিথ্যা মামলা ও হয়রানি।

কিন্তু কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। অশুভ শক্তির সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করেই তিনি লক্ষ্যের দিকে অবিচল পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বেই এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবিমৃশ্যকারী কাণ্ডকারখানা থেকে তিনি বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করেন। এ সময়ের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার পাশাপাশি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু করে আইনের শাসন বন্ধ করেছিলেন, তা থেকে জাতিকে মুক্ত করেন শেখ হাসিনা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৩০ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির সঙ্গে যারা জড়িত, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহিদের আত্মার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার পথ সুগম করেন তিনি।

হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক সময় চাঙা হয়ে ওঠেন; নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

দলীয়প্রধান হিসাবে এ দীর্ঘ সময় চলার পথে অনেক চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের এ অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন। তার সফল নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই শাসনামলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

পিতামাতা হারা নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত অবস্থায় জনগণের ডাকে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। দেশে এসেই আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। তিনি হতাশাগ্রস্ত কর্মীদের উজ্জীবিত করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশব্যাপী সফর করে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনি ফিরেছিলেন বলেই বদলে গেছে বাংলাদেশের গতিপথ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের রাজনীতিতে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সাধারণ মানুষের দাবি-দাওয়া আদায়ে বরাবরর মতোই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গণমানুষের দল হিসাবে তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়েও সুদৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে দলটি। আমাদের গৌরবের ইতিহাস মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনে দলটির দায়িত্বশীল ও সংগ্রামী ভূমিকা মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে আন্দোলিত করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও যৌক্তিক দাবি আদায়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভূমিকা অগ্রগণ্য।

প্রতিটি ইতিবাচক আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারিতে রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করে দলটি মানুষের মন জয় করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত