ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

রাসুলের মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার আহ্বান (স.)
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। দিনটি সমগ্র বিশ্বে মুসলমানের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সুবহে সাদিকের সময় মহাকালের এক মহাক্রান্তিলগ্নে মহানবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আবার ৬৩ বছরের এক মহান আদর্শিক জীবন অতিবাহিত করে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ১১ হিজরি রবিউল আউওয়াল মাসের ১২ তারিখ একই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি মুসলিম সমাজে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে সমধিক পরিচিত। ঈদ, মিলাদ আর নবী তিনটি শব্দ যোগে দিবসটির নামকরণ হয়েছে। ঈদ অর্থ- আনন্দোৎসব, মিলাদ অর্থ- জন্মদিন আর নবী অর্থ নবী বা ঐশী বার্তাবাহক। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর আগমন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) গোত্রীয় শাসনের স্বৈরাচারে দগ্ধ, মুষ্টিমেয় বিত্তশালীর শোষণে নিঃস্ব এবং সামাজিক দূরাচারে অতিষ্ঠ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তাওহিদের বাণী প্রচারের কারণে স্বজাতির নির্যাতনে নিরূপায় হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে মদিনায় হিজরতে বাধ্য হয়েছিলেন। অতঃপর ঐতিহাসিক মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে ইহুদি, পৌত্তলিক, খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের নিয়ে মদিনাতে একটি স্বাধীন-স্বতন্ত্র জাতি ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

অল্প সময়ের ব্যবধানে রাসুলের আদর্শিক জাগরণ সমগ্র আরব উপদ্বীপকে আয়ত্ত করে নিয়েছিল। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সুশাসন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন একটি সুদৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ বিশ্বের মুসলমানগণ নানা সংকটে জর্জরিত। অথচ মহানবীর আর্দশ্য অনুসরণের মধ্য দিয়ে মানুষ মুক্তি লাভ করতে পারে। রাসুলের আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠতে পারে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দুনিয়ায় আগমন উপলক্ষ্যে মুসলিম জাহানের মানুষ তাঁর জন্মোৎসব পালন করে আসছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মহান সত্তাকে আল্লাহতায়ালা সব জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করার গুরুত্ব ও প্রয়োজন সর্বাধিক। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের সঙ্গে তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে। তাঁর প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাস্বরূপ। যার মধ্যে উত্তম আদর্শ, পবিত্র কোরআন যার মহান চরিত্র এবং যার প্রতি খোদ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ দরূদ পাঠ করে থাকেন, তার জন্মোৎসব উদযাপন করার সৌভাগ্য আল্লাহর এক মহান অবদান।

অন্যায়, অসত্য ও জুলুম-নির্যাতনে মানুষ যখন ছিল নিষ্পেষিত, ঠিক তখনই একজন মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসেবে দুনিয়াতে মহানবীর আর্বিভাব ঘটে। মানুষে মানুষে হানাহানি, তুচ্ছবিষয় নিয়ে যুগের পর যুগ যুদ্ধ এবং আদর্শিক ও নৈতিকতা বলতে সমাজে যখন কোনো কিছু ছিল না, তখন মহানবী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন সমগ্র পৃথিবীর জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে। রবিউল আউওয়াল মাস এলে মুসলিম সমাজে মিলাদ মাহফিল ও সিরাত মাহফিল আয়োজনের ধুম পড়ে যায়। আলেম-ওলামায়েগণের অভিমত মহানবীর আদর্শ অনুসরণ করার পাশাপাশি মিলাদ মাহফিল আর সিরাত মাহফিল আয়োজন করতে হবে। কেননা, মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শকে জীবনে ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর প্রতিপাদ্যবিষয় হোক সংঘাত নয়, চাই রাসুলের আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত