ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্ব হার্ট দিবসের সতর্কতা

বাড়তি লবণ ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ
বিশ্ব হার্ট দিবসের সতর্কতা

প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে আমরা লবণ গ্রহণ সাধারণ নিয়ম হলেও চিকিৎসকদের মতে, দিনে খাবারের সঙ্গে এক চামচ পরিমাণ লবণ গ্রহণ করা যায়। এর বেশি হলে ডেকে আনবে মারাত্মক বিপদ। ঘরে তৈরি খাবারের সঙ্গে প্যাকেটজাত খাবারেও ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষকরা এসব খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়েও বেশি লবণ পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে স্ট্রোক এবং হার্ট (হৃৎপি-) অ্যাটাকের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই সবাইকে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কমাতে হবে। রান্নায় পরিমিত লবণ যথেষ্ট হওয়ায় খাবারে আলাদা করে লবণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গতকাল বিশ্ব হার্ট দিবসের প্রাক্কালে এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হলো। প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হয় হার্টের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভালোবাসা দিয়ে প্রতিটি হৃদয়ের যত্ন নিন।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ সংঘটিত হয় অসংক্রামক রোগের কারণে। হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, শ্বাস রোগের মতো এসব অসংক্রামক রোগে প্রতিবছর দেড় কোটি মানুষ মারা যায়, যাদের বয়স ৩০ থেকে ৬৯-এর মধ্যে। এই অকাল মৃত্যুর ৮৫ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে কম বয়সি হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের তুলনায় এই হার ১৭ গুণ বেশি। বাড়ছে অল্প বয়সে মৃত্যুও। অল্প বয়সে ধূমপান, মদ্যপান, কোলেস্টেরল ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন গবেষকরা। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অত্যধিক লবণযুক্ত প্যাকেটজাত খাবারে হৃদরোগী বাড়ছে। গবেষণার তথ্য বলছে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে সর্বোচ্চ ৭৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণকে নিরাপদ মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে বহুল প্রচলিত ৬১ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে। আর ৩৪ শতাংশ খাবারে নিরাপদ মাত্রার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১ দশমিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ পাওয়া গেছে। এছাড়া, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ ও ঝালমুড়ির কোনোটিতেই নির্ধারিত মাত্রার লবণ পাওয়া যায়নি, বরং এগুলোতে দ্বিগুণের বেশি লবণ রয়েছে। একইভাবে চাটনিতে ৮৩ শতাংশ, চিপসে ৬৩ শতাংশ এবং ডাল ও বুট ভাজার ৬০ শতাংশে দ্বিগুণ লবণ রয়েছে বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। গবেষকদের মতে, দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষই এ জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। অতিমাত্রায় লবণ গ্রহণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাওয়ায় এসব রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে লবণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সেইসঙ্গে খাদ্যপণ্যের প্যাকেটে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিদিন পাঁচ গ্রাম লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেয়। একজন সুস্থ মানুষের দিনে এক চা চামচের কম লবণ খাওয়া উচিত। না হলে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, হার্টের জটিলতা দেখা দিতে পারে। সব গবেষণায় হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ গড়ে কমপক্ষে ১০ গ্রাম লবণ খায়। মানুষ প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে অনেকখানি লবণ গ্রহণ করে। গবেষকদের মতে, হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক রোগ। বিশ্বের প্রায় ৬২ কোটি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি দেড় সেকেন্ডে বিশ্বব্যাপী একজন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকে। এ রকম চলতে থাকলে ২০৩০ সালে মৃত্যুর হার বেড়ে বছরে ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারা যাবে হৃদরোগের কারণে। বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীদের হৃদরোগে আক্রান্তের হার বেশি। বিএসএমএমইউ’র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যাদের বয়স ৩৫-এর নিচে, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি উন্নত বিশ্বের তুলনায় ১৭ গুণ বেশি। তাই হৃদরোগের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যেমন সতর্ক হতে হবে তেমনি লবণ গ্রহণের বিষয়টি সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত