ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্তঃসত্ত্বাদের হল জীবন

বাস্তবতার নিরীক্ষে নিতে হবে ব্যবস্থা
অন্তঃসত্ত্বাদের হল জীবন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আবাসিক সুবিধা, বসবাসের শর্তাবলি এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১ এর ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা হলে সিট পাবেন না। সে অনুযায়ী, বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল কর্তৃপক্ষ ওই হলে থাকা বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নোটিশ দিয়েছে। হল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘বিবাহিত মেয়েদের দায়িত্ব স্বামীদের। সঙ্গতি নেই এমন অবিবাহিতদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে হলে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে।’ অন্তঃসত্ত্বা ও বিবাহিতরা হলে থাকলে কর্তৃপক্ষকে কী ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়, সে সম্পর্কে ওই হলের প্রভোস্ট জানিয়েছেন, হল কর্তৃপক্ষের সমস্যার চেয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সমস্যা বেশি। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, অন্তঃসত্ত্বা রুম মেটের কারণে তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। হল কর্তৃপক্ষও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হলে রাতে কোনো হাউসটিউটর থাকেন না। রাতে যদি অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তাদের কে দেখবে? সেই দায় হল কর্তৃপক্ষ কীভাবে নেবে। সবচেয়ে বড় কথা, এটা নিয়ম বহির্ভূত। তিনি বলেছেন, ‘বিবাহিত শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব তাদের স্বামীরা নিতে পারেন। অবিবাহিত, পিতা-মাতা নেই- এমন শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে বিবাহিতদের রাখা সম্ভব না। ৮০০ সিটের হলে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী থাকেন। অনেক বিবাহিত নারী আছেন, যাদের পরিবার ঢাকার বাইরে থাকে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি নিরাপদ হলে একটি সিট পাওয়ার অধিকার রাখেন। তার স্বামীর টাকা আছে কী নেই, সেটা দেখার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের নয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে আসন বরাদ্দ পাওয়া বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা হাত্রীদের হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। হল প্রভোস্টের স্বাক্ষর করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- অতি দ্রুত হলের সিট ছেড়ে না দিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ‘বিবাহিত’ স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলে মনে করেন নারী অধিকার কর্মীরা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর হল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করতে জবি প্রশাসনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সোলায়মান তুষার। নোটিশের অনুলিপি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও হলের প্রভোস্টকে পাঠানো হয়। নোটিশে বলা হয়, ‘যে বিধান মেনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই বিধানের ফলে কার্যত বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে ছাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অন্যথায়, উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব। বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা সন্তানদের নিয়ে আমাদের সমাজে অভিভাবকরা কতটা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন, সেটা বাস্তবতার নিরীক্ষে ছাড়া বিচার করা যায় না। যেসব শিক্ষার্থী হলে বসবাস করেন, তাদের জীবনযাপনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা হল কর্তৃক্ষকে নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা নামিদামি সরকারি কলেজের হোস্টেলে সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধা সাধারণত কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারে না। হলের মধ্যে বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, তখন যে যার মতো পালানোর চেষ্টা করেন। এ পরিস্থিতিতে কেউ শারীরিকভাবে চলাফেরা করতে অপারগ হলে, তাকে কে সাহায্য করবে। পরিবারের মধ্যে কেউ অন্তঃসত্ত্বা হলে আনন্দের পাশাপাশি ওই অন্তঃসত্ত্বার জীবনযাপন সম্পর্কে অন্যরা উৎকণ্ঠায় কাটান, কখন কী হয়। একজন বিবাহিত বা অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীর জন্য বাসার পরিবেশ হলে নিশ্চিত করা যাবে না। বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের জীবন আচরণ অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা। তিনি স্বামী সংসার নিয়েই গল্প গুজব ও মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকে। অন্য রুম মেটের সঙ্গে স্বামী সংসার নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেন। ফলে পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়। শিক্ষার্থীকে বিয়ে তাদেরই করা উচিত, যারা তাদের লেখাপড়ার পাশাপশি ও তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন। কেন না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করার মতো হল কর্তৃপক্ষ আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো গড়ে উঠেনি। তাই অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে পারিবারিক পরিবেশে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হলে, সেটাই হয়তো শ্রেয় হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত