ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কিশোর গ্যাংয়ের গণছিনতাই

আইনি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ
কিশোর গ্যাংয়ের গণছিনতাই

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বসিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সশস্ত্র মহড়া ও পরপর বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনাটি ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। দলবদ্ধ ছিনতাইকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রকাশ্যে একের পর এক ছিনতাই করেছে। তারা সামনে যাদের পেয়েছে, তাদের কুপিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। ছিনতাইকারীরা এ সময় রাস্তার পাশের ১৫ থেকে ২০টি দোকানের মালামাল লুটপাট করেছে। এ ঘটনার পর তোলপাড় শুরু হয়ে যায় পুরো মোহাম্মদপুর এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে, থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ বসিলা এলাকায় দিনের বেলা ও সন্ধ্যায় চুরি-ছিনতাই ঘটছে। অথচ ওই এলাকায় পুলিশের নিয়মিত কোনো টহল লক্ষ্য করা যায় না। গত শুক্রবারের ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯ এ ফোন করেও তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীরা পুলিশের কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। ৯৯৯ ফোন নম্বরটি জরুরি সহায়তা পাওয়ার জন্য মানুষ ব্যবহার করে থাকে। অথচ ওই নম্বরে ফোন করার প্রায় চার ঘণ্টা পর পুলিশের একটি টহল গাড়ি সেখানে গেলেও ঘটনার বিষয়ে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

বসিলা গার্ডেন হাউজিং এলাকায় ছিনতাই নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে গত শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনাটি ছিল অভূতপূর্ব। এর আগে দলবদ্ধ হয়ে এভাবে নির্বিচারে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল অস্ত্র হাতে বসিলা বাজারের সামনে থেকে ছিনতাই শুরু করে। ছিনতাই শেষ হয় অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় গিয়ে। এরই মধ্যে পথচারী ও নদীর পাশের ওয়াকওয়েতে হাঁটতে আসা দর্শনার্থীদের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। চাপাতি দিয়ে আঘাত করে এবং কোমরের বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে মোবাইলসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়। আমাদের সমাজে কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার নতুন কিছু নয়। শুধু মোহাম্মদপুর এলাকা নয়, রাজধানীজুড়ে রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এক একটি এলাকায় এক একটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয় কোনো একজন। এলাকায় অধিপত্য বিস্তার করার জন্য কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে সংঘাতে ছড়িয়ে পড়ে। দল চালাতে গেলে কিশোর গ্যাংয়ের নেতাদের অর্থের প্রয়োজন হয় এবং তারা ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করার মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করে।

কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ নিরীহ মানুষ সব সময়ই আতঙ্কে থাকে। বয়স কম হওয়ায় তারা যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে দ্বিধাবোধ করে না। শুধু চুরি-ছিনতাইই নয়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদক গ্রহণের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। দল চালানো ও মাদক সংগ্রহের জন্য তাদের অর্থের প্রয়োজন হয়। আর এই অর্থ তারা ছিনতাইয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তা-ঘাট ও গলির মুখে আড্ডা দেয়ার সময় নানা রকম অশালীন আচরণ করে যা রীতিমতো দৃষ্টিকটু। রাজধানীতে পুলিশের যেসব টহল থাকে তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলেও আইনি দুর্বলতার সুযোগে তারা অল্পদিনের মধ্যে কারাগার থেকে বের হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি সংকট হচ্ছে- কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ মামলা করে না কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দিতে চায় না। ফলে তাদের বিচারের সম্মুখীন করা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এ অবস্থা তো দীর্ঘদিন চলতে পারে না। কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আমাদের সম্ভাবনাময় যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে, সেটা কারো কাম্য হতে পারে না। যুবসমাজই আমাদের দেশগড়ার কারিগর। তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সমাজে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত