ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খেলাপি ঋণের পাহাড়

ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে আনতে হবে পরিবর্তন
খেলাপি ঋণের পাহাড়

মানুষ তার প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। পারিবারিক প্রয়োজনে সাধ্য অনুসারে ঋণ নেয়ার পর তা যথা সময়ে পরিশোধ করা হলে লেনদেন প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক থাকবে। তবে এর ব্যত্যয় ঘটলে পারস্পারিক লেনদেন কার্যক্রম ভেঙে পড়বে এবং ঋণখেলাপি ব্যক্তিকে মানুষ আর ঋণ দিতে আগ্রহী হবে না। পারিবারিক গন্ডি পেরিয়ে যারা শিল্প-কলকারখানা স্থাপন কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান, তারা দেশের ব্যাকিং খাত থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেন। বিশাল অংকের ঋণ পাওয়ার সুযোগ একমাত্র ব্যাকিং খাতে গড়ে উঠেছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অবস্থা বাংলাদেশে নেই। মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ পায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই টাকা থেকে ঋণ দিয়ে তারাও সুদ আদায় করে। এখানে ব্যাংক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। আমানত গ্রহণ এবং ঋণ দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারিত হয়। দেশে যত বেশি শিল্প-কলকারখানা হবে, তত বেশি কমসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ব্যবসায়ীরা ঋণ নিযে যদি তা সময়মতো পরিশোধ না করেন, তাহলে ঋণদান প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে পড়বে। নতুন করে কেউ আর ঋণ পাওয়ার সুযোগ পাবে না। দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না। ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন উন্নতি হবে, জাতীয় জীবনেও তেমনি অগ্রগতি হবে। সে কারণে ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের অথনৈতিক অঙ্গনে গতিশীলতা আনার জন্য ঋণ পরিশোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তবে অস্বস্তির খবর হচ্ছে, বর্তমানে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। ৩ মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। বিশেষ সুবিধা আর ছাড় দেওয়ার পরও কমছে না খেলাপি ঋণ। বিপরীতে ব্যাংক খাতের এই ‘প্রধান সমস্যা’ দিনের পর দিন বাড়ছে। করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের দুটি প্রধান সমস্যা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ঢালাওভাবে ছাড় নয়, পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। খেলাপি নামে সমস্যা দূর করতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রহীতা ও দাতার ক্ষেত্রে একইভাবে রেগুলেশন প্রয়োগের পাশাপাশি নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগের কথাও জানান তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এরই মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। ডলার সংকটে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দারস্ত হয় বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে আগামী মাসে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে। তবে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার শর্তজুড়ে দিয়েছে।

আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। খেলাপি ঋণের হার ১০ দশমিক ১১ শতাংশ হলেও ব্যাংক খাতে ঋণ আদায় হচ্ছে না। অথচ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এভাবে চলতে থাকলে ঋণখেলাপি কমবে না। আইএমএফ-এর ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। অথচ এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছাড়িয়ে গেছে ২০ শতাংশ। আইএমএফ’র শর্তমতে, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে আইএমএফ’র হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান না থাকায় খেলাপি বাড়ছে বলে মনে করেন অথনীতিবিদরা। তারা বলছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো কঠোর হতে হবে। কেননা, ঋণ পরিশোধে বারবার সুযোগ দেওয়ার পরও তেমন কোনো সুফল আসছে না। সে কারণে এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত