ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা

নূরনাহার নিপা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমক রোগ, যা সাধারণত স্ত্রী মশা থেকে মানবদেহে বাহিত হয়। সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু রোগের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী। যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না, প্রতিটি ওয়ার্ডে এতো রোগীর ভিড় সত্যিই ভাবতে পারছি না! তবুও স্বজনরা নিজ দায়িত্বে তাদের আগলে রাখেন, চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, রোগীদের সুস্থ করার জন্য। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড প্রদর্শন করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ রোগীর বেডে মশারি নেই। প্রচণ্ড গরমের কারণে অনেকে মশারি ব্যবহার করছেন না। হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন খোলামেলাভাবে, হাসপাতালে মশার উপদ্রব থাকলেও কয়েল জ্বালিয়ে থাকেন রোগীরা। ডেঙ্গু রোগীদের অবশ্যই মশারির ভেতরে থাকা উচিত। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিভাগ। কিন্তু তারা মশারির ভেতরই থাকতে রাজি নন। আর যারা সচেতন তারা হয়তো বাড়ি থেকে মশারি নিয়ে আসেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ। তবে পর্যাপ্ত মশারি রয়েছে হাসপাতালে। ডেঙ্গু অবাধে গ্রামে, শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছ। হাসপাতালে প্রতিদিন জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন নানা বয়সি রোগী। জ্বরকে শুধু ভাইরাল জ্বর ভেবে উপেক্ষা করা ঠিক না। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেশির ভাগের শরীরের মিলছে ডেঙ্গুর জীবাণু। প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন, এডিস মশা কামড়ালেই কি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় কি না? চিকিৎসকরা কিন্তু ঠিক তেমনটা বলছেন না। বরং তারা বলছেন, পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার মধ্য সংক্রমিত হয়, শুধু তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সংক্রমক ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে এরা ভাইরাস ছড়াতে থাকে, ডেঙ্গু সাধারণত চার প্রকার, তবে যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের পরবর্তীতে এ রোগ দেখা দিলে প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ : জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে, মাথাব্যথা, চামড়ার লালচে দাগ, চোখের পেছনে ব্যথা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, কোষ্টকাঠিলা পেটব্যথা, স্বাদের পরিবর্তন, রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং পেশিতে ও ঘাঁড়ে ব্যথা হওয়া। এডিস মশা কীভাবে চিনবেন? একটু লক্ষ্য করলেই যে কেউ ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশাকে খালি চোখেই চিনতে পারবেন। মাঝারি আকারের সাদা-কালো ডোরাকাটা এই মশার শুঁড় থাকে লোমযুক্ত, মাথার পেছনের উপরের দিকেও সাদা দাগ আছে, তাই সাধারণ মশা থেকে সহজেই আলাদা করা যায়।

যেহেতু এডিস মশা দিনে কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ঘরে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করুন। ঘরের আনাচে-কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় মশার ওষুধ বা স্প্রে দিতে পারেন, সুরক্ষিত থাকতে দিনে যথসম্ভব লম্বা পোশাক পরাই ভালো। এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বিস্তার করে, এ কারণে অফিস, ঘর এবং আশপাশে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও পানি জমা থাকলে ২ থেকে ৩ দিন পর পর পানি পরিবর্তন করুন। অনেক সময় ফুলের টবে, এসি বা ফ্রিজের নিচের স্থানে জমে থাকে, গ্রামে শহরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, অফিস, আদালত, আশপাশের এলাকায় কীটনাশক ওষুধ ছিটাতে হবে, সচেতনমূলক প্রচারণা আরো জোরালোভাবে করা উচিত। প্রতিদিন টিম প্রচারণা , প্রতিটি ঘরে, ঘরে, শহরজুড়ে সামগ্রিক বিষয়ে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরো সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করতে হবে। বাসা বাড়িতে ড্রোনের ব্যবহারে আরো গতি বাড়াতে হবে। কীটনাশক ছিটাতে স্প্রে ম্যানের সংখ্যা টিম বাড়াতে হবে। ডেঙ্গুর মৌসুমে এসব স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সচেতন হতে হবে, এক্ষেত্রে তাই সবাইকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য’র এই কঠিন ঝুঁকি মোকাবিলায় এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত