ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্যপ্রাণীর বেচাকেনা ও পাচার

প্রতিরোধে প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ
বন্যপ্রাণীর বেচাকেনা ও পাচার

রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র রাস্তার পাশে কিংবা দোকানে বিক্রি হচ্ছে বন্যপ্রাণী। প্রকাশ্যে অবাধে চলছে এসব বন্যপ্রাণীর কেনাবেচা। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বিষয়টি অনেক সময় এড়িয়ে যায়। মূলত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে না জানা এবং এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবই বাড়াচ্ছে এই অপরাধ।

তবে শুধুমাত্র যে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এমন নয়, গোপনে বিক্রি এবং পাচার হচ্ছে অনেক বন্যপ্রাণী। পাশাপাশি বন্যপ্রাণী পাচারের অন্যতম প্রধান রুট হচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে প্রতিবছরই বিপুল সংখ্যক বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচার হচ্ছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী পাচার বন্ধ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক সময় পুলিশ বন্যপ্রাণী পাচারের সঙ্গে জড়িতদের আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। শুধু মামলার সংখ্যা দেখে বন্যপ্রাণী পাচারের সঠিক পরিসংখ্যান মিলবে না। সাধারণত অভিযোগ এলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ ও মামলা করে পুলিশ। বন আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ এনে পুলিশ মামলা করে।

বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের অভিযোগে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকার থানাগুলোতে মামলা হয়েছে মাত্র পাঁচটি। এসব মামলার বাদী সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশের ১৩ জেলায় প্রকাশ্যে বন্যপ্রাণী কেনাবেচা চলে। জেলাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাঙামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান ও গাজীপুর।

এসব জেলা থেকে বন্যপ্রাণী ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আনা হয়। পরে সেগুলো দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে পাচার করা হয় মোটা টাকার বিনিময়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে জীবন্ত প্রাণী সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, বিষধর সাপ, তক্ষক, ছোট সরীসৃপ প্রভৃতি। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও লাওসেও পাচার হচ্ছে এসব প্রাণী। শুধু গোপনে নয়, প্রকাশ্যেও বিক্রি ও পাচার হচ্ছে এসব বন্যপ্রাণী।

নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। সাধারণত জনবহুল স্থান, যেমন- বাসস্ট্যান্ড, হাট ও বাজারে হরহামেশাই কেনাবেচা হয় এসব প্রাণীর অঙ্গ-প্রতঙ্গ। দেশের বিত্তশালী সম্প্রদায়ের অনেকেই অননুমোদিতভাবে বন্যপ্রাণী পোষেন। কারো কারো বাড়িতে শোভা পায় বন্যপ্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। এর মধ্যে রয়েছে গন্ডার বা হরিণের শিং, হাতির দাঁত, বাঘছাল ইত্যাদি। কেউ শখ পূরণ করতে গিয়ে বা আভিজাত্যের প্রদর্শন হিসেবে এ ধরনের বন্যপ্রাণী বা প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রাণী বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বড় অংশ অবৈধভাবে সংগ্রহ করা। বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচার রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ চান সংশ্লিষ্টরা। আসামিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করলে বন্যপ্রাণী পাচার কমে আসবে বলে মনে করেন তারা। বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলছেন, বন্যপ্রাণী পাচার একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। এটা বাংলাদেশের বড় সমস্যা।

পাচার রোধে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। আইনজ্ঞরা বলছেন, বন্যপ্রাণী পাচার জঘন্য অপরাধ। বন্যপ্রাণী পাচার রোধে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। আইনের মাধ্যমে আসামিদের শাস্তির আওতায় আনলে পাচার অনেকটা কমে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত