নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস

বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান দরকার

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পাইপলাইন গ্যাস-সংযোগ অনেক বছর ধরে বন্ধ থাকায় দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে দামও। এলপিজির দরদাম নির্ধারণের দায়িত্ব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। বিশ্ববাজার এবং স্থানীয় আর্থিক সংশ্লেষ, বাজার ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে নিয়মিত এলপিজির সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করে আসছে জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত কয়েক মাস ধরে রান্না ও পরিবহনের এ জ্বালানির দাম একটানা বাড়ছে। তবে বিইআরসির নির্ধারিত বর্ধিত দামের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশ চড়া দামে বোতলজাত গ্যাস কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ১২ কেজি এলপিজির সিলিন্ডার। সব শেষে এ সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৩৬৩ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। গত মাসে এ সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ২৮৪ টাকা। ফলে আগের দামের সঙ্গে এ মাসে ৭৯ টাকা যুক্ত হয়েছে। প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১১৩ দশমিক ৬১ টাকা। অথচ দাম নিয়ে গ্রাহক অভিজ্ঞতা অনেকটাই তিক্ততার। তারা বলছেন, ১ বছরের বেশি সময় ধরেই তারা নির্ধারিত দামে এলপিজি কিনতে পারছে না। বিক্রেতাকে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মতো বেশি দিতে হতো। তবে গত ৩ মাস ধরে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে এ গ্যাস। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্থানীয় বাজারে এলপিজির দাম বাড়ানো হয়। এ গ্যাস না থাকলে বাসায় রান্না করা যায় না। তাই এক ধরনের জিম্মি হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। এমনকি টাকা পরিশোধের রসিদ চাইলেও দিতে চায় না বিক্রেতারা। ঢাকার বাইরে অধিকাংশ জেলায় এলপিজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ডিলার পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এলপিজি কোম্পানির গেট থেকেই তারা বেশি দামে কিনছেন। স্বাভাবিকভাবে তারা এবং খুচরা বিক্রেতারা তাই বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। তবে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের মূল্যায়ন ও দাবি বিবেচনায় নিয়েই এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়। অথচ খুচরা বাজারে মূল্যহার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের নৈতিক সমস্যা রয়েছে। বিইআরসি এবং জেলা প্রশাসন নির্ধারিত দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তাতে তেমন কোনো সুফল মিলছে না। অতিরিক্ত দামে এলপিজি বিক্রির বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের মন্তব্য হচ্ছে, এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রিতে পরিবেশকদের অনেক এজেন্ট থাকে। তাদের আরো সাবএজেন্ট থাকে। তিন-চার হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে যায়। এতে ঘোষিত দামের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগ জানায়, দেশে ২০০৯ সালে এলপিজির বার্ষিক চাহিদা ছিল প্রায় ৬৬ হাজার টনের মতো। বর্তমানে চাহিদা ১৪ লাখ টনের বেশি। পাইপলাইন গ্যাস-সংযোগ অনেক বছর ধরে বন্ধ থাকায় এলপিজির চাহিদা বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের দেশে কোনো পণ্যের দাম একবার বাড়লে তা কমানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমনিতেই বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে। বন্যা কিংবা বৃষ্টি হলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের কোনো শেষ নেই। ব্যবসায়ীদের যুক্তির কাছে ক্রেতারা অসহায়। পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে মাঝেমধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালালেও অভিযান শেষ হওয়ার পর দাম আগের অবস্থায় ফিরে যায়। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে কোনো কিছু করার থাকে না। মানুষের আয় যেভাবে বাড়ে, পণ্যের দাম তার তুলনায় বেশি বাড়ে। মানুষ প্রতিদিন যেসব পণ্য কিনে, তার প্রতিটির পণ্য বাড়তি দামে কিনলে কত টাকা বাড়তি দিতে হয়- সেই হিসাব তো ভোক্তাদের কাছে থাকে। তবে সবচেয়ে হতাশার কথা হচ্ছে, এলপিজির দাম কেন বাড়বে। সরকার নির্ধারিত দাম তো মুনাফা ধরেই নির্ধারণ করা হয়। তাহলে কারণে-অকারণে এলপিজির দাম বাড়ানোর তো কোনো যৌত্তিক কারণ নেই। এখানে মধ্যস্বত্বভোগীর অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। তবে যে কোনো কারণেই হোক, নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বেচাকেনায় মধ্যস্বত্বভোগীর অস্তিত্ব চলে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রেণের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীর অস্তিত্ব অন্তরায়। এলপিজির দাম সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া না গেলে সাধারণ ক্রেতাদের পকেটশূন্য হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে সরকারের এই সংস্থাটির ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে।