ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কী শিখলাম করোনাভাইরাস থেকে?

অধ্যাপক আবদুল আহাদ
কী শিখলাম করোনাভাইরাস থেকে?

করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এর প্রভাবের কারণে মানুষ বাকরুদ্ধ। সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, কিন্তু লেখকের চোখে করোনাভাইরাস মানবজাতিকে কিছু শিক্ষা দিয়েছে, যা নাকি মানুষ ভুলে গিয়েছিল, অথবা চিন্তা করেনি। নিন্মে তার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো-

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ইসলাম ধর্মে বলা হয়ে থাকে ভবিষ্যতের কোনো কাজ করার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলার নিয়ম। যার অর্থ যদি আল্লাহ চান তবে আমরা ভবিষ্যতে এই কাজ করব, এই সময়ে করব, আসার তারিখ, যাওয়ার তারিখ, উদ্বোধনীর সময় ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে এটি বোঝা গেল ভবিষ্যতের সব পরিকল্পনা আনুমানিক, অথবা আপাতত স্থিরকৃত। নিশ্চিত করে কোনো কিছুই বলা যায় না। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন ভবিষ্যতের কাজের সময়ে ইনশাআল্লাহ বলার অভ্যাস করা, কেননা ভবিষ্যতের কাজের সময়ে একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। অদৃশ্য শত্রু: আমাদের মধ্যে অনেক তথাকথিত বিজ্ঞানী/বুদ্ধিজীবী, যারা নাকি অদৃশ্যে কোনো কিছু বিশ্বাস করে না। তারা আল্লাহর দেওয়া নীতিতে বিশ্বাসী নহে। কারণ আল্লাহকে দেখা যায় না। কিন্তু এখন মানুষের মুখে, এমন কী রাষ্ট্রপ্রধানের মুখেও অদৃশ্য শত্রুর কথা শোনা যায়। মানুষ এখন মুখোশ ব্যবহার করে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে। মনে মনে ধারণা, যে কোনো সময়ে কোভিড-১৯ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে যাবে। ইসলাম ধর্মে এক আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করতে হয়। কোভিড-১৯ আমাদের না দেখা জিনিসের প্রতি বিশ্বাস করা স্মরণ করিয়ে দেয়। হালাল/হারাম খাবার: আল্লাহ মানুষকে অনেক ভালোবাসেন। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘একজন স্তন্যদায়ী মা তার সন্তানকে যতটুকু ভালোবাসেন, আল্লাহ তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি মানুষকে ভালোবাসেন।’ আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন কীভাবে চলা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মানুষ ধোকায় পড়ে যায়। শয়তান মানুষকে খারাপ জিনিস অত্যন্ত আকর্ষণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র আল- কোরআন সুরা হিজরে (১৫:৩৯); ‘শয়তান বলল হে আমার রব, যেমন করে আমাকে বিভ্রান্ত করেছেন অনুরূপভাবে আমি এখন পৃথিবীতে তাদের (মানবজাতিকে) তাদের জন্য চাকচিক্য সৃষ্টি করে এসবকে (মানবজাতি) বিভ্রান্ত করে দিব।’

মহামারিতে প্রস্তুত থাকা: ধনীদেশগুলো কোটি কোটি ডলার খরচ করে মারণাস্ত্র তৈরি করে। এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ দেশে তা বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই যুদ্ধ ধনী রাষ্ট্রের জন্যই সূত্রপাত ঘটে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে দেখা গেল, উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজেদের দেশেও এর মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ছিল না। উন্নত রাষ্ট্রে অনেক মানুষ ভেন্টিলেটরের অভাবে প্রাণ হারাল। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ মারণাস্ত্রের পেছনে যথা মিসাইল, পারমাণবিক বোমা, ড্রোন, বিমান বিধ্বংসী কামান ব্যবহৃত হয় তার শতকরা ১০ ভাগও যদি স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত হতো, তাহলে পরিস্থতি অন্যরকম হতো। পরিবেশ দূষণ: সারা বিশ্বে মানব সম্প্রদায় চিৎকার করে বলছে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে। প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে পরিবেশ দূষণের কথা বলা হচ্ছে। গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে মেরু অঞ্চলে বরফ গলা শুরু হয়েছে। সামুদ্রিক পানির উচ্চতা বেড়ে চলেছে। অনেক রাষ্ট্র তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েই চলছে। প্রতিটি মিটিং বা সভা শেষে সিদ্ধান্ত আসছে কীভাবে পরিবেশ দূষণ কমানো যায়। সম্প্রতি মে মাসের ২০১৮ সালের ১৫ বছরের সুইডেনের মেয়ে গ্রেটা একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করে। ৩ মাস পরে মেয়েটি অগাস্ট মাসে সুইডেনের সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ জানাতে থাকে যে সুইডেন সরকারকে অবশ্যই কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে, যা নির্ধারিত হয়েছিলো ২০১৫ সালের প্যারিসের এক সম্মেলনে। জাতিসংঘের একটি বিশেষ অঙ্গীকার আছে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনা। কিন্তু কে শুনে কার কথা, সবাই যার যার খেয়াল খুশি মতো চলছে। কিন্তু কোভিড-১৯ পৃথিবীর সব মানুষকে বাধ্য করছে ঘরে আবদ্ধ থাকার জন্য। সব ধরনের যোগাযোগ যেমন: ট্রেন, বাস, উড়োজাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার সব যানবাহন বন্ধ। শিল্প কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। পৃথিবীর সব কিছু যেন থেমে গিয়েছে। ফলে দেখা গেল অল্প কয়েক দিনের মধ্যে পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেল। পৃথিবী যেন নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেল। পরিবেশ উন্নত হলো। মানুষ এখন স্বাস্থকর নির্মল বায়ু সেবনের সুযোগ পেল।

ধৈর্য্য: ধৈর্য্য একটি মহৎ গুণ। কোরআন শরীফে আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে আছেন। বর্তমান সমাজে মানুষ অস্থির। বিশেষ করে তরুণ সমাজ। তারা এক ঘণ্টার বেশি এক জায়গায় থাকতে নারাজ। কোভিড-১৯ এর কারণে মানুষ এখন দিনের পর দিন গৃহবন্দি এবং আমাদের সাহায্য করেছে ধৈর্য্য ধরার। মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে জেলে অথবা গৃহবন্দিদের কি জ্বালা। এখন আশা করা যায় এ সব মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা জেগে উঠবে।

বাংলাদেশে অনলাইন যোগাযোগ: উন্নয়নশীল দেশে মানুষের বিশেষ করে যারা ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের মধ্যে পুরোনো রীতিনীতি ধরে রাখার প্রবণতা রয়েছে। লেখক নিজে একজন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি লক্ষ্য করেছেন, বিভিন্ন দপ্তর থেকে যখন চিঠি প্রেরণ করা হয়, তারা তাদের পিয়নের মাধ্যমে প্রতিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কাছে চিঠি/নোটিশ নিয়ে যায়। সেখানে বিভাগীয় প্রধান কর্তৃক সই নেওয়া হয়। কিছু কিছু সিনিয়রদের বক্তব্য তারা নিয়মিতভাবে ই-মেইল চেক করায় অভ্যস্ত নয়। তাদের মূদ্রিত কপি না দিলে তাদের আপত্তি থাকে। অথচ তাদের সবার কাছে কম্পিউটার/ল্যাপটপ এবং প্রিন্টার রয়েছে। এবং এই কাজগুলোর গ্রুপ মেইলের মাধ্যমে একটি ক্লিক দ্বারা নিমিষেই কাজ করা সম্ভব। অনেক শিক্ষকদেরই নিকট স্মার্টফোন রয়েছে। তারা সেখান থেকে মেইলটি পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে অবলোকন করতে পারেন। যা-ই হোক, কোভিড-১৯ এর বদৌলতে আমাদের বাধ্য করেছে ই-মেইল চেক করায় অভ্যাস করা।

লেখক: অধ্যাপক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত