পরিবারে বাল্যবিয়ের প্রবণতা

পরিণত বয়সে বিয়ে সবার জন্য কল্যাণকর

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের সমাজে বাল্যবিয়ের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। নানা কারণে বিশেষ করে অভিভাবকরা মেয়েদের অপরিণত বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। কন্যা সন্তানদের অভিভাবকরা সব সময়ই কামনা করে কোনো একটি ভালো ছেলের হাতে মেয়েটিকে তুলে দিতে। ভালো ছেলে পাওয়া গেলে অভিভাবকরা সাধারণত মেয়ের বিয়ের সঠিক বয়সের বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। তবে বিয়ে-পরবর্তী সময়ে সমস্যা যখন দানাবেঁধে ওঠে তখনই অভিভাবকদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তখন আর তাদের করার মতো কিছু থাকে না। বাংলাদেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে বাল্যবিয়ের প্রবণতা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে এসব পরিবারের যেসব মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা পুত্রবধূ হিসেবে যারা এসেছে তাদের ৬০ শতাংশেরও বেশির বয়স বিয়ের সময় ১৮ বছরের কম ছিল। এছাড়া ৫৬ শতাংশ বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মাধ্যমিক পাস করার আগেই বিয়ে হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও কারণ জানতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবারে এই জরিপ চালিয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, এসব জেলায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। গবেষণায় দেখা যায় বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর, সেখানে বাল্যবিয়ের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোনায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া যোগ্য পাত্র পাওয়ার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অভিভাবক। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে ১৮ শতাংশ দারিদ্র্য, যৌতুক কম বা না চাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কথা বলছেন ৭ শতাংশ, পড়ালেখায় ভালো না হওয়ার কারণে ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণের কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ। বাল্যবিয়ে নিয়ে যেসব গবেষণা হয় সব একই ধরনের ফল। আমাদের সমাজে যেসব ছেলে অল্প বয়সি মেয়েদের বিয়ে করছে তাদের নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। অথচ এটিও একটি সামাজিক সমস্য। বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। অথচ তাতে তেমন কোনো সুফল আসছে না। অনেক সময় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হলেও বাল্যবিয়ের খবর স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগ কম। ভালো ছেলে পেলে কন্যার অভিভাবক হাতছাড়া করতে চান না। অনেকে মনে করেন বিয়েটা হয়ে যাক তারপর না হয় পরে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বাল্যবধূ স্বামীর সংসারে যাবে। অনেক সময় শিক্ষার্থী মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় শর্ত থাকে বাল্যবধূ যত দিন ইচ্ছা লেখাপড়া করবে। তবে বাস্তবতায় সেটি আর হয় না। বিয়ের পর স্বামী এবং শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের ওপর একটা দায়িত্ব-কতর্ব্য নববধূর ওপর বর্তায়। দায়িত্ব ও কর্তব্যের খাতিরে বাল্যবধূকে কিছু সামাজিক রীতি-নীতিও মেনে চলতে হয়। অপরিণত বয়সে বিয়ের বিষয়টি যেমন আমাদের সমাজে কেউ মেনে নিতে চায় না। আবার বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বসবাস না করলে সেটাও ভিন্ন চোখে দেখা হয়। সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে যেটা বাস্তবিক অর্থে সবার জন্য মঙ্গলজনক সেটাই অবলম্বন করা। অল্প বয়সে বিয়ে হলে অল্প বয়সে মা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অল্প বয়সি মায়ের সন্তান স্বাস্থ্যগত পরিপূর্ণতা পায় না। সে কারণে ওই সন্তানটি পরবর্তীতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। সেটা জাতির জন্য কল্যাণকরও হয় না। সে কারণে পরিণত বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত। সেটি ছেলে কিংবা মেয়ে সবার জন্যই সমান প্রযোজ্য।