ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নগরজীবনে অতিবৃষ্টি আতঙ্ক

দুর্ভোগ লাঘবে নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ
নগরজীবনে অতিবৃষ্টি আতঙ্ক

এই মুহূর্তে নাগরিক জীবনে সবচেয়ে বড় সংকট ও দুর্ভোগের নাম হচ্ছে অতিবৃষ্টি। বৃষ্টিতে দিনে রাতে যে কোনো সময় এই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলেই মনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কখন অতি বৃষ্টি নামবে। কখন নেমে আসবে দুর্ভোগ। অস্বাভাবিক বৃষ্টি এবং জলজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কাজকর্ম বন্ধ করে মানুষ ঘরে বসে থাকছে। অফিসে পৌঁছানো এবং অফিস থেকে বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। নগরজীবনে আরেক আতঙ্কের নাম অতিবৃষ্টি। বৃষ্টি আল্লাহর রহমত এবং প্রাণীকূলের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। বর্ষাকালে স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে প্রকৃতি ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বৃষ্টিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধি পায় এবং শুষ্ক মৌসুমে তা সেচ কাজে লাগে। বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাবে এটাও স্বাভাবিক। তবে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা তো থাকতে হবে। বৃষ্টি থামানোর শক্তি কারো নেই। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের শক্তি, সামর্থ ও ব্যবস্থাপনা তো মানুষের আয়ত্তের মধ্যে। সেজন্য সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে প্রতিনিয়ত স্থবির হয়ে পড়ছে রাজধানীর জনজীবন। বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায়, বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘরমুখো মানুষকে যানবাহনের মধ্যে অসহায় অবস্থায় অপেক্ষা করতে হয়। রাস্তার পানি মাড়িয়ে যানবাহনগুলো দ্রুত চলাচল করতে পারে না বলেই রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যানবাহন সংকটে তিন চাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অটোরিকশার চালকদের বক্তব্য হচ্ছে- পানির মধ্যে স্টার্ট বন্ধ হলে কিংবা ইঞ্জিনের মধ্যে পানি ঢুকলে সর্বনাশ। বন্ধ হওয়া অটোরিকশা চালিয়ে গ্যারেজে নেয়ার মতো বিড়ম্বনা আর নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে চালানোর কারণে ভাড়া বেশি নিতে হয়। এছাড়া যাত্রী নিয়ে ঘণ্টার ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করতে গিয়ে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। তাই নগরবাসীর এই দুর্ভোগ লাঘবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রধান প্রধান সড়কে সৃষ্ট তীব্র যানজটের চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ। যানজটের কারণে আধা-কিলোমিটার দূরত্বের পথ দুই ঘণ্টায়ও যাওয়া সম্ভব হয় না। গত দুই দিনের আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা ও যানজটে আটকে পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হন হাজারো মানুষ। সেদিন জলাবদ্ধ রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন। বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হলো চলতি মাসে। আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষা বর্তমানে বিদায় নেওয়া প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এজন্য বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প রয়েছে। আর এর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে পশ্চিমা লঘুচাপ। ফলে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। প্রতি বছরই এই সময় কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়। তবে এতো বেশি হয় না। এক পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পূর্ব-উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। সে কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পানি অনায়াসে ড্রেন কিংবা নালায় নেমে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে রাস্তার পানি সরে যাবে। তবে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরীর রাস্তাঘাটের আশপাশে গড়ে উঠা ভাসমান দোকানপাটের ময়লা রাস্তার ড্রেনে গিয়ে পড়ে। ফলে ড্রেন ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায়। পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। রাস্তার ওপর পানি জমে যায়। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও রাস্তার পানি নামে না। ফলে যানবাহনে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। জলজট হলে নিত্য পণ্য পরিবহন করা সংকটময় হয়ে উঠে। বিশেষ করে মাছ, মাংস কিংবা শাকসবজির সরবরাহ কমে যায়। ব্যবসায়ীদের বেশি দামে পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে বেশি দামে পণ্য সামগ্রী কিনতে হয়। তাই রাস্তার বৃষ্টি পানি দ্রুত অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত