ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশের মৎস্য খাতের সাফল্য

অর্থ সংস্থান ও আমিষের অন্যান্য উৎস
দেশের মৎস্য খাতের সাফল্য

অর্থ সংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান অপরিসীম। আর এই খাতের উন্নয়নে সরকারের সাফল্যও অনেক। বিশেষ করে বাজারে চাষের মাছ না থাকলে আমিষের মারাত্মক অভাব দেখা যেত। তবে সরকারের সুদূরপ্রসারি পদক্ষেপের কারণে আজ সেই সংকট আর নেই। দেশের মাছ উৎপাদনের যে ধারা চলমান রয়েছে, তা আগামীতে থেমে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। গ্রামীণ কিংবা শহরতলীর জলাশয় এবং পুকুর ও নালা ডেবায় হরেক রকম পদ্ধতিতে হরেক রকম মাছের চাষ হচ্ছে। পরিবারের নারী সদস্যরা এ মাছচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় সমন্বিত প্রক্রিয়ায় মাছ চাষাবাদ করা হচ্ছে। জেলেরাই শুধু মাছ চাষ করবেন এবং তারাই মাছ বিক্রি করে জীবনধারণ করবেন, সেই প্রচলিত ধ্যান-ধারণা এখন আর নেই। এখন অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক ব্যাংক থেকে ঋণ এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারা এখন এই ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তরতাজা ফরমালিনমুক্ত মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য শুধু তাদেরই হচ্ছে, যারা মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সবচেয়ে গৌরবের কথা হচ্ছে, বৈশ্বিক করোনার মধ্যেও বিশ্বের যে তিনটি দেশ মাছ উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ।

গত ১০ বছরে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। গ্রামীণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি সর্বোপরি দরিদ্র্য দূরীকরণে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে শুধু ভারত ও চীন। যা ২০২২ সালে মৎস্য খাতের অনন্য এক অর্জন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ ১ কোটি ৯৫ লাখ বা ১২ শতাংশের বেশি মানুষ মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অভ্যন্তরীণমুক্ত জলাশয়, অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়, আধানোনা পানির জলাশয় ও সামুদ্রিক জলাশয় বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদের চারটি উৎস। ৫০ শতাংশ মৎস্য উপখাতের অবদান। বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের ১ দশমিক ২৪ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশে মাছ রপ্তানি হয়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৪২ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৫ হাজার ১৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গৃহীত নানা উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এ ছাড়া বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম, তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বর্তমানে ইলিশের মোট উৎপাদন ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। সুনীল অর্থনীতির বিকাশে সমুদ্রে প্রচলিত ও অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ অনুসন্ধান, সংরক্ষণ ও টেকসই আহরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন কর্মকৌশল প্রণয়ন এবং তা এসডিজির সঙ্গে সমন্বয় করে হালনাগাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ ও সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। মাছ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ৩৭ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষপদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক। জিন ব্যাংকে এখন পর্যন্ত ১০২ প্রজাতির মাছ সংরক্ষিত আছে। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৬ জন মৎস্যজীবী-জেলের নিবন্ধন এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়েছে। ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী-জেলের নিবন্ধন ও ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হয়েছে।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত