ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত: পাঠ-প্রতিক্রিয়া

জংশন শরৎ সংখ্যা অনন্য এক আয়োজন

রহিমা আক্তার মৌ
জংশন শরৎ সংখ্যা অনন্য এক আয়োজন

শরৎ মানেই মেঘমুক্ত আকাশ, শরৎ মানেই রোদবৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। সময়-অসময়ে ঝুম বৃষ্টি। শরৎ মানেই সুনীল আকাশ আর কাশফুলের শ্রভ্রতায় প্রকৃতিতে নেমে আসা অন্যরকম আবহ। ঠিক শরতের স্বরূপ বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়েছে সাহিত্যের ই-সাময়িকী ‘জংশন সেপ্টেম্বর ২০২৩ সংখ্যা’। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বর্তমানে প্রিন্ট ম্যাগাজিনের পাশাপাশি ই-ম্যাগাজিনগুলোও দারুণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তেমনিভাবে কবি ও গল্পকার সোহেল বীরের সম্পাদনায় প্রকাশিত ই-সাময়িকী জংশনও এরই মধ্যে লেখক ও পাঠকমনে জায়গা করে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় অনলাইনে ফেসবুক জংশন পেইজে প্রকাশিত হয়েছে এবারের শরৎ সংখ্যাটি।

পাতায় পাতায় ভরা শরতের সৌন্দর্য। পড়েছি আর হারিয়ে গেছি একটা মেঘমুক্ত শরতের বেলাভূমিতে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রখ্যাত কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘মাপজোক’ কবিতা দিয়েই শুরু হয়েছে এবারের সংখ্যাটি। ‘মানুষ তোমার কোনো মাপজোক নেই/কখনো মাপোনি কেন তুমি তোমাকেই?’ অসাধারণ লাইন দিয়ে তিনি কবিতাটি শেষ করেছেন। জংশন শরৎ সংখ্যাটি গদ্য, পদ্য, ছড়া ও ছোটদের পাতা, কবি ও কবিতা পর্ব, পত্র-সাহিত্যসহ অসাধারণ লেখামালায় সাজানো হয়েছে। ‘এখনও কি শরৎ আসে?’ শিরোনামে প্রচ্ছদণ্ডগদ্য লিখেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক বায়েজিদুর রহমান। শরতের কথা লিখতে গিয়ে তিনি লিখেছেন- ‘এখনও কি মোড়লের দীঘিতে শালুক ফোটে? মাছরাঙা বসে থাকে অমন ধ্যানীর মতো? আচ্ছা, রেহনুমা এখন কোথায়...?’ উনার মতো আমার মনেও প্রশ্ন- আসলেই কি এখন শরৎ আসে আগের মতো? কিছুদিন আগে ছয়ঋতুর কবিতা নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেকেই বলেছেন, ‘এখন কি ছয় ঋতু আছে?’ প্রকৃতি এখন আর আগের নিয়মে চলে না বলেই এমন প্রশ্নের জন্ম। খুব প্রয়োজন না হলে আমরা অনেকেই বাংলা পঞ্জিকা মনে রাখি না। তেমনি শরতকেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাঁশফুলের ছবি দেখলে মনে পড়ে শরৎ এলো বুঝি। এই তো সেদিন এক বন্ধুর পোস্ট দেখলাম, সে লিখেছে- ‘শরৎ এসেছে নাকি আসবে? কাশবনে তো যেতে হবে’। সত্যিই তাই শরৎ কখন আসে আর কখন চলে যায়...!

‘প্রিয় ঋতু শরৎ’ শিরোনামে আরো একটি প্রচ্ছদ রচনা লিখেছেন মোহাম্মদ অংকন। শরতের প্রকৃত ছবি তার লেখায় সাবলীলভাবে উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেন, ‘নদীতে যখন থেমে যেতে থাকে প্রবল স্রোতধারা, তখনই যেন শরতের আগমন ঘটে।’ বাস্তব ও অসাধারণ লাইনটি। শরতেও বৃষ্টি হয়, পানির স্রোত দেখা যায়, দেখা যায় জলাশয়। আর শহুরে পানি বন্দি জীবনের ভোগান্তি তো মাঝেমধ্যেই দেখে শহরবাসী। অংকনের লেখায় যেনো স্মৃতিতে হারিয়ে যাই- তালের বড়া খুঁজেও পাই না, শরতের ফুল-ফল থেকে শুরু করে মায়ের হাতের খাবার। লেখাটি যেমন তথ্যবহুল, তেমনি আমরা লেখাটি পড়ে শৈশবে হারিয়ে যাই।

বেকার যুবকের যাপিত জীবন আর মেধার অবমূল্যায়নের এক বাস্তবতা ফুটে উঠেছে বিশিষ্ট কথাশিল্পী শরিফুল ইসলামের ‘অসমাপ্ত অধ্যায়’ নামক গল্পে। গল্পের চরিত্রে স্বপ্নেরা আনন্দ দেয়; কিন্তু বাস্তবতা স্বপ্নের কাছে প্রতিনিয়ত মার খায়। লেখক আশরাফুল ইসলামের অণুগল্প ‘মৎসমানবী’ পড়তে গিয়ে নিজেও যেন মাছের আঁশটে গন্ধ পেলাম। অনেক বেশি মজা পেলাম বরিশাইল্যা ও চাটগাঁইয়াদের নিয়ে লেখা গল্পকার ইলিয়াস বাবরের ‘ভাষা’ অণুগল্পে।

চিঠি বলতেই আমি হারিয়ে যাই আবেগের ঘরে। কবি ও গল্পকার রুবাইদা গুলশনের লেখা চিঠি পড়ে ভাবছি, বর্তমান প্রজন্মের কথা। মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে চিঠি যে কি তা বর্তমান প্রজন্ম হয়তো জানেই না। এখনও সময় পেলে নিয়মিত চিঠি লিখি। সম্বোধন এর জায়গায় নিজের প্রিয়জনদের রাখি। চিঠি লেখা মানেই আবেগকে জাগিয়ে দেয়া, সেই স্বাদ পূর্ণ করলেন রুবাইদা গুলশান তার ‘বিরহের নান্দনিক আখ্যান’ শিরোনামের পত্র-সাহিত্যে। এ সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ এটি। ‘বৃষ্টি অথবা মৌনতার গল্প’ শিরোনামের অনুগল্প লিখেছেন কবি ও গল্পকার সোহেল বীর। সেখানেও উঠে এসেছে বিদায়ী বর্ষাদিনের প্রেমণ্ডভালোবাসার সমাপ্তি ঘটেছে বিরহ-বেদনায়।

‘কবি ও কবিতা’ পর্বে এবারের কবি ছিলেন- মাহী ফ্লোরা, আহমদ সাইফ ও নকিব মুকশি। জংশন শরৎ সংখ্যাটি ছোটবড়ো সবার ভালোলাগার একটি সংখ্যা। বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফের ‘মানবতা’ নামের বিশেষ ছড়াটি এবারের সংখ্যায় নতুনমাত্রা যোগ করেছে। খুব সুন্দর ও সহজ কথায় তিনি ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণী তুলে ধরেছেন। ধর্মের নামে আমরা যেন কখনোই কারো ওপরে আঘাত না করি- শারীরিক কিংবা মানসিক। তিনি লিখেছেন, ‘লক্ষ কোটি মানুষ শোনেন ধর্মগ্রন্থ সব-/শুনেও কেউ মর্মকথা করেন অনুভব?’ নির্বাচিত ছড়ায় রয়েছে বিশিষ্ট ছড়াকার জগলুল হায়দার-এর ‘কালের কাহন’। এক ছড়ায় তিনি পুরো বাংলার ছয় ঋতুকে তুলে ধরেছেন। প্রকাশিত হয়েছে বিশিষ্ট লেখক স. ম. শামসুল আলম ও জিয়া হকের শরতের নির্বাচিত ছড়া। আরো যাদের শরতের ছড়া দিয়ে এ সংখ্যাটি সমৃদ্ধ হয়েছে- কবি মাহবুবা ফারুক, শঙ্খশুভ্র পাত্র (ভারত), গোলাম নবী পান্না, মোস্তাফিজুল হক, রানা জামান, রুহুল আমিন সজল, আহমেদ ইউসুফ, খায়রুল আলম রাজু, জেসমিন সুলতানা চৌধুরী, আবুবকর সালেহ, মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী, শফিকুল আলম সবুজ, ফেরদৌসী খানম রীনা, মুস্তাফা ইসলাহী, জাহাঙ্গীর ডালিম, নওল নজরুল, ইমামউদ্দীন ইমন, মিলন সরকার।

পত্রিকার অনেক অংশজুড়ে রয়েছে পদাবলি। চমৎকার সব কবিতা লিখেছেন- বিশিষ্ট কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, আলমগীর রেজা চৌধুরী, শাহীন রেজা, ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, পলিয়ার ওয়াহিদ, প্রত্যয় হামিদ। পদাবলিতে আরো আছেন কবি রথীন পার্থ মণ্ডল (ভারত), নাসরিন জাহান মাধুরী, মাহফুজা অনন্যা, শায়েখ শোয়েব, মোস্তফা হায়াদার, খাদিজা শিরিন, আদ্যনাথ ঘোষ, রেজাউল করিম রোমেল, ইকবাল হোসেন রোমেছ, শফিক মোরশেদ, রহিম ইবনে বাহাজ, শামিউর রহমান পুলক, শাহনেওয়াজ মিঠু, রুকাইয়া আহমেদ, ইমরান খান রাজ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত