শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি-নোংরামি

নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনের অন্তরায়

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এক ছাত্রীর বাবার করা ধর্ষণ মামলায় সহযোগিতার অভিযোগের পর রাজধানীর মতিঝিলের একটি খ্যাতনামা কলেজের অধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। গত ৭ অক্টোবর পরিচালনা কমিটির সভায় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। তবে গভর্নিং বডির একজন সদস্য জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে অধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। আগামী ৩০ অক্টোবর তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ওই অধ্যক্ষের দুর্নীতির তদন্ত ও বিতর্কিত বর্তমান গভর্নিং বডির সব সদস্যের পদত্যাগ দাবি জানিয়ে আসছিল ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরাম।

ওই অধ্যক্ষের আমলের সব কর্মকাণ্ড অবৈধ। তার ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড, অবৈধ ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য’ তদন্ত করে শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত অধ্যক্ষের যাবতীয় দেনা-পাওনা পরিশোধ না করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ফোরাম। অভিভাবক ফোরামের অভিযোগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একজন দাতা সদস্য লোভ-লালসা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে নির্যাতন করেন ওই অধ্যক্ষের সহযোগিতায়।

ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। মামলায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়। তাকে আসামি করায় এবং শিক্ষা প্রশাসন ও অভিভাবকদের চাপের মুখে গত ২১ সেপ্টেম্বর শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ওই অধ্যক্ষ পদত্যাগপত্র দাখিল করতে বাধ্য হন। অভিভাবক ফোরাম ‘বিতর্কিত’ বর্তমান গভর্নিং বডির সবার পদত্যাগ দাবি করে জানায় অধ্যক্ষ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে লটারি ছাড়াই বিভিন্ন শ্রেণিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করিয়ে কোটি কোটি টাকার ভর্তি-বাণিজ্য করেছেন এবং এনটিআরসিএ’র অনুমোদন ছাড়াই ২০২৩ সালে ৫৯ জন শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি করেছেন।

এছাড়া ক্যাচমেন্ট এলাকার নামে মতিঝিল ক্যাম্পাসে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে শুধু ‘এজিবি কলোনির’ জন্য ৪০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে অবৈধভাবে অন্যদের বঞ্চিত করে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগও উত্থাপন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাজধানীর সনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিগত দিনে যা ঘটেছে তা রীতিমতো নোংরামি এবং সেখানে যা হয়েছে তাতে সাধারণ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। একজন দাতা সদস্য একজন ছাত্রীকে নিয়ে যেভাবে রং তামাশায় মেতে ছিলেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে তার সেই অপকর্মে যেভাবে সহযোগিতা করেছিলেন, তা রীতিমতো ভয়ংকর ও আতংকের। কেন না, যখন কোনো ছাত্রী এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়, তখন তার অভিভাবক দিশাহারা হয়ে পড়েন। বয়োবৃদ্ধ একজন দাতা সদস্যের ‘লোপুট দৃষ্টি’ যখন কোনো কিশোরী ছাত্রীর ওপর পড়ে এবং ওই প্রতিষ্ঠনের প্রধান যখন তাকে সহযোগিতা করেন, তখন অন্যান্য অভিভাবকদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়।

কন্যাসন্তানদের শিক্ষাঙ্গনে পাঠিয়ে অনেক অভিভাবক রোদ বৃষ্টির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অপেক্ষা করেন সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে। সেই সন্তানের জীবন যদি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিপন্ন হয়ে উঠে তখন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলুষতায় ঢেকে যায়। যারা পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ললাটে কলঙ্ক লেপন করলেন তার বিচার সামাজিকভাবেও করা দরকার। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্রী নাজেহাল হওয়া কিংবা যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটছে। কেন একজন শিক্ষক তার কন্যা সমতুল্য ছাত্রীর প্রতি কুদৃষ্টি দেবেন, তাকে মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ম্যাসেজ দেবেন- তা অভিভাবকদের বোধগম্য নয়।

বিবাহিত জীবনযাপন করে একজন শিক্ষক যখন এ ধরনের কুকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তখনও অভিভাবকদের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মন মানসিকতা একজন শিক্ষক কীভাবে পোষণ করেন, সেটা ভেবে দেখা দরকার। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের নোংরামী বন্ধ হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসব অনৈতিক কমকাণ্ড জাতীয় সমস্যার পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয়ে সরকারসহ সবার নজর দিতে হবে।

এ সংক্রান্ত সমস্যা যাতে ভবিষ্যতে আর সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা দিকনির্দেশনা থাকা দরকার। তা না হলে নারী শিক্ষার দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী উন্নয়নের স্রোত থেকে অন্ধকারে ডুবে যাবে।