ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিশুর মানস গঠনে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব

শাহানারা স্বপ্না
শিশুর মানস গঠনে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব

মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ শিক্ষা। শিশু জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ অনুষঙ্গের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।

জীবনের জন্যই শিক্ষা, জীবন থেকে শিক্ষাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। মানুষের সংক্ষিপ্ত পার্থিব জীবনে শিক্ষা বয়ে আনে কল্যাণ। শিশুর শিক্ষার শুরুতেই মূল্যবোধ সম্পন্ন ও নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারলে শিশু কল্যাণের পথে জীবন গড়ার সুযোগ পাবে। একটি দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা কোমলমতি শিশুদের ধীরে ধীরে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

যে শিশু নিজের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, সাহিত্য ইত্যাদি সম্পর্কে জানার সুযোগ পায় না, তার মধ্যে কীভাবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টি হবে? একমাত্র মানব শিশুরই প্রয়োজন হয়, শিক্ষা ও পরিচর্যা। এ জন্য আল্লাহর প্রথম বাণীই ছিল- ‘পড়’। জীবন চলার সঠিক পথ চেনার জন্য মানুষকে তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে পড়তে হবে, উল্লেখ করেছেন, ‘কলমে’র কথা যা দিয়ে লেখা হয়। শিশু প্রথমে পারিবারিক পরিসর থেকেই মূল্যবোধের মৌলিক শিক্ষা পেতে শুরু করে। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নেয়। চারপাশে যা কিছু দেখে তা শেখে। তার বোধ-বুদ্ধি-বিশ্বাস অনুযায়ী তার আচরণবিধি গড়ে ওঠে।

যে কোনো অভিভাবক মাত্রই স্বীকার করবেন, বর্তমানে সমাজে ধর্মহীনতার যে সয়লাব তার অন্যতম কারণ ভুল তত্ত্ব ও তথ্যে ভরপুর বইয়ের বিস্তৃতি। কাল্পনিক ও প্রমাণহীন তথ্যে ভরপুর বইকে সহজলভ্য করে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাবে শিশুরা ক্রমশ বইয়ের জগৎ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বর্তমান সামাজিক অস্থিরতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা, সম্মানবোধ ও সম্প্রীতির অভাব তরুণ সমাজের মাঝে ব্যাপক আকারে বিরাজ করছে। এর অন্যতম কারণ, ভুল বই পড়ে ভুল শিক্ষা, মূল্যবোধহীন ভুল শিক্ষা। নৈতিক জ্ঞানহীন শিক্ষা মানুষকে অন্তসারশূন্য করে তোলে। তাই শিশুকে জৈবিক শিক্ষার পাশাপাশি আত্মিক শিক্ষা দিতে হবে। এ শিক্ষা সঠিকভাবে পূরণ হলেই মানুষ জীবনে শান্তি, শক্তি ও স্বস্তি পায়। আত্মিকভাবে দেউলিয়া হলে তার জীবনযাপন অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। শিশু কী দেখছে, কী খাচ্ছে, কীভাবে খাচ্ছে, কী করছে, কীভাবে করছে ইত্যাদি প্রতিটি বিষয় মনিটরিং করতে হবে।

সঠিক পদ্ধতি জানাতে হবে তাদের। আর একজন মানুষের পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠার পথটি একা একা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। পুরোপুরি একটি জীবন বিধান সম্পর্কে কোনো একজন মানুষের জ্ঞান খুব বেশি হতে পারে না। সেজন্যই আল্লাহর দেওয়া গাইড অনুসরণ সবচেয়ে নিরাপদ। আজকের তরুণরা সঠিক শিক্ষার অভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার বদলে অস্ত্রের মহড়া দেয়। অনৈতিক কাজে নিজেকে জড়ায়। কাঁচা টাকার লোভে কলম ছুড়ে ফেলে, হাতে তুলে নেয় অস্ত্র।

যুবসমাজের দৃঢ়তা আজ তলানিতে ঠেকেছে। অল্প সময়েই হতাশাগ্রস্ত হয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছে নানারকম জীবনবিনাশী নেশাদ্রবব্যে। পরিবারে পরিবারে অশান্তির আগুন বাড়ছেই, অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। এসব ক্ষতি থেকে বাঁচতে ভারসাম্যময় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : সাহিত্যিক ও কলাম লেখক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত