ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জনস্বাস্থ্যে মানসিক সমস্যা

দরকার পরিপূর্ণ মেডিকেল চিকিৎসা
জনস্বাস্থ্যে মানসিক সমস্যা

বাংলাদেশে প্রতি আটজনে একজন মানসিক রোগী। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শিশুদের ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় মানসিক সমস্যায় ভোগা ৯১ শতাংশই চিকিৎসা পায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবাসমূলক বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউজ। গতকাল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রাক্কালে এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি জরিপ করে। ওই জরিপ অনুযায়ী ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশ। সাত থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ডব্লিউএইচও বাংলাদেশে ২০১৯ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ব্যবস্থা চালু করে। যার লক্ষ্য হচ্ছে স্নায়ুবিক ও মানসিক রোগে আক্রান্তদের জন্য মানসম্মত পরিষেবা চালু করা। কর্মসূচির লক্ষ্য হলো ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ কোটি মানুষের জন্য সেবার পরিধি বাড়ানো। এ কর্মসূচি গ্রহণকারী ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০২০ সালে করা প্রাক-মূল্যায়ন তথ্যানুসারে বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭০ শতংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত। কোভিড-১৯ মহামারির পর এ সংখ্যা আরো বেড়েছে। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা বাজেটের মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিষেবাগুলোতে বরাদ্দ রয়েছে। দেশের ৯১ শতাংশ মানসিক রোগী চিকিৎসা পায় না। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো : উদ্বেগ, আতঙ্ক, সামাজিক ভয়, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, সূচিবায়ু, নির্দিষ্ট জিনিসে ভয় বা ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া এবং ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি। আমাদের আশপাশের মানুষের জীবনে এসব সমস্যা থাকলেও আশার কথা হলো, সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০৩০। ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর অ্যাডলেসেন্ট হেলথ ২০১৭-২০৩০ এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও গুরুত্বের জন্য ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তকরণ। আগে আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন এর গুরুত্ব বাড়ছে। দিন দিন মানসিক সমস্যার সংখ্যক বাড়ছে। তবে, আমাদের দেশে মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশ কম। মাত্র ২৭০ জন মনোবিজ্ঞানী আছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন মানসিক রোগী আছেন, তার সঠিক তথ্য নেই। ২০১৯ সালের পর দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও, তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের আটজনের একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশেও হারটি এমনই হবে। খুব বেশি হেরফের হবে না। প্রতি বছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৪ সালে প্রথম বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। সে সময় দিবসটির যে থিম ছিল তার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘সারা বিশ্বের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নত করা’। আর এবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার’। সমাজে অনেকের মধ্যে মানসিক সমস্যা রয়েছে এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিলে তেমন একটা গুরুত্বের চোখে দেখা হয় না। তবে শিশু-কিশোর বিশেষ করে কন্যা সন্তানদের বেলায় অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে সাধারণত মানুষে চিকিৎসকদের কাছে যেতে আগ্রহী হয় না। গোপনে ঝাড়ফুক কিংবা তাবিজকবজ দিয়ে সারানোর চেষ্টা করা হয়। তবে এতে হিতে বিপরীত হয়। রাজধানীর আগারগাঁয়ে একটি পুর্ণাঙ্গ মানসিক হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে মানুষ পরিপূর্ণ চিকিৎসা পেতে পারে। মানুষ নানা কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনের কারণ না জেনেই অনেকে এ জন্য ভূত কিংবা অন্য কোনো অশরীরী বস্তুর অস্তিত্বের সন্ধান করে। আর এই ধরনের রোগের কোনো মেডিকেল চিকিৎসা নেই বলেও সমাজে আরো একটি গুজব রয়েছে। এটা একটা সামাজিক সমস্যা। ফলে মানসিক সমস্যা দূর করতে মানুষ কবিরাজি চিকিৎসার ওপর ঝুঁকছে। অথচ তাতে কোনো সুফল মিলছে না। মানসিক সমস্যাকে প্রথম থেকে গুরুত্ব না দিলে তা যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন আর করার মতো কিছুই থাকে না। তাই মানসিক সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে মেডিকেল চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত