অভিমত

হারিয়ে যাচ্ছে ডাকবাক্স

আব্দুল কাইয়ুম

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানী ঢাকার রাস্তার ধারে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ডাকবাক্সগুলো। দেখলে মনে হয় যেন বহুকাল ধরে ব্যবহার হচ্ছে না বাক্সগুলো। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের প্রতিটি ডাকবাক্সের অবস্থা একই। অধিকাংশ ডাকঘরে তেমন কার্যক্রম নেই। বাক্সগুলোতে মরিচা পড়ে আছে। কিছু ডাকবাক্সে রঙ করে নতুনত্ব আনার চেষ্টা হলেও পোস্টার ও লিফলেটের ফলে বাক্সগুলো চিনতে কষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে এর ব্যবহার একেবারে নেই বললেই চলে। মূলত চিঠির ব্যবহার কমার ফলে এ অধঃপতন। সর্বশেষ কবে এগুলোতে হাতের ছোঁয়া লেগেছে তা বলা অসম্ভব। আধুনিকতার কারণে চিঠির আদান-প্রদান কমে গেছে। ডাকযোগে তথ্য পাঠানোর ব্যবস্থা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

ডাক বলতেই মাথায় আসে হাতের লেখা চিঠির কথা। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে সবাই ই-মেইল, হোয়াটঅ্যাপ, ইমু, মেসেঞ্জার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের তথ্য আদান-প্রদান করেন। অতি সহজে ও হাতের নাগালে পাওয়ায় চিঠির মূল্যায়ন কমে গেছে। এতে করে আগের মতো ডাক নিয়ে নেই কোনো কথাবার্তা। চিঠির ব্যবহার এতটাই কমেছে যে, মাসে একবার বাক্সগুলো খোলার প্রয়োজন মনে হয় না। অথচ একটি সময় ডাকই ছিল মনের কথা দূরে পাঠানোর একমাত্র মাধ্যম। এখন আর চিঠির জন্য বারবার ডাকবাক্সের খোঁজ নেয়া হয় না। একটা সময় ছিল চিঠি পাঠানোর জন্য যতটা উৎসাহী থাকত, ততটাই অপেক্ষায় থাকত কখন উত্তর আসবে। সেই অপেক্ষায় ব্যাকুল থাকত ঊনিশ শতকের সবাই। বর্তমানে ডাকবাক্স যেন এক সুদূর অতীত। এখন ডাকবাক্সের কদর আর আগের মতো নেই বললেই চলে। ডাকবাক্সে চিঠি ফেলে দিয়ে কবে তার প্রিয়জন সেই চিঠি পাবেন এই অপেক্ষা এখন আর কেউ করেন না।

ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডাক বিভাগে চিঠির ব্যবহার কমে যাওয়ায় অনলাইন সেবা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তারা ই-পোস্টাল নামের সাইড থেকে মানুষকে সেবা দিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাইড থেকে যে কোনো সময় যে কোনো পণ্য অর্ডার করতে পারবে। এতে করে সময় ও অর্থ বাঁচবে সবার। ডাক বিভাগের কর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে হাতে পৌঁছে দেবে। পোস্ট অফিসগুলো এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এরই মধ্যে ডাক বিভাগের সেবাকে কাজে লাগিয়ে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সারা দেশে পণ্য ডেলিভারি দিয়ে আসছে।

মাসুম বিল্লাহ নামের একজন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ঊনিশ শতকে প্রিয়জনদের বার্তাবাহক ছিল ডাকবাক্স। সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জনের কাছে চিঠি পাঠানোর ডাকবাক্সের কদর। খামে ভরা কাগজের চিঠির জন্য আমরা ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করতে দেখতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আশায় থাকত কখন আসবে চিঠি। কালেভদ্রে আসে দু-একটা চিঠি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় নেই আগের মতো আওয়াজ আর আন্তরিকতা। এখন সেই ডাকবাক্সগুলোর আবেদন নেই। প্রিয়জনের চিঠির আশায় ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকার দিনও ফুরিয়েছে। রাত জেগে চিঠি লেখা এখন শুধুই রূপকথার গল্পের মতো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে মোবাইল এসে পুরোনো সব আবেগ কেড়ে নিয়েছে। হৃদয়ে অণুরন তোলা ডাকবাক্সগুলোয় আজ ঘুণে ধরেছে। নিখাদ আবেগ আর ভালোবাসা নেই। প্রযুক্তি আবেগকে হারিয়েছে। চিঠির যে সুগন্ধ তা হারিয়ে গেছে। মানুষ এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করছে। এতে করে আগের মতো আবেগ কাজ করে না। একটা সময় ছিল, ডাকঘরে বারবার খবর নিতো কবে তার চিঠি আসবে। এতে করে তার মাঝে আবেগ কাজ করত। কিন্তু বর্তমানে অতি সহজে মনের কথা বলতে পারার মাঝে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সরকারি চিঠিপত্র ছাড়া তেমন কোনো চিঠিই পাওয়া যায় না বাক্সে। ডাক অধিদপ্তরের পরিকল্পনা পরিচালক মো. আবু তালেব আমার সংবাদকে বলেন, মানুষ যেন আধুনিকায়নের যুগে ডাকসেবা পায় সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘরে বসে সেবা পাওয়ার কার্যক্রম চালু রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে সব সুযোগ-সুবিধা পায় সেজন্য ডাক বিভাগ একটি অনলাইন সাইড পোস্টাল ই-কমার্স নামে চালু করা হবে। এটির মাধ্যমে যে কোনো জিনিস ঘরে বসে অর্ডার করতে পারত। ডাক বিভাগের সদস্যরা এসব জিনিস প্রত্যেকের হতে পৌঁছে দেবে। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে এই সাইটটি চালু হয়ে যাবে। তাছাড়া পোস্টাল সার্ভিসের যে কোনো জিনিস যেন অফিস সময়ের পরও যেন কোথাও পাঠাতে পারে তার ব্যবস্থাও থাকবে এখানে। প্রতিটি আঞ্চলিক ডাকঘর বা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এসব সেবা দেয়া হবে। এতে করে দেশের যে কোনো প্রান্তে পণ্য পৌঁছে যাবে। যেহেতু চিঠির প্রচলনটা নেই, তাই বিকল্প সার্ভিস হিসেবে অনলাইন সাইড চালু করা হবে। বর্তমানে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের মাধ্যমে ডেলিভারি দিয়ে থাকে। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে অনলাইন ও সরাসরি দেয়ার সুযোগ রয়েছে।