ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় স্বার্থে প্রতিপালন করা আবশ্যক
ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন রক্ষায় গতকাল থেকে দেশে শুরু হয়েছে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ সময় পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেললেই জেলেদের গুনতে হবে জরিমানা। এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে নির্দিষ্ট নৌ এলাকায় রয়েছে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের তৎপরতা। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রজনন রক্ষায় প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা থাকার এই সময়ে জেলেদের প্রণোদনাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি জাটকা এবং মা ইলিশ ধরা থেকে শুরু করে আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মওজুদ, বিনিময় ও পরিবহণ করা যাবে না। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ইলিশের প্রজননকাল, চলাচলের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে ওই অভয়াশ্রমে প্রতি বছর আগেভাগেই দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ইলিশ সম্পদ বাড়াতে সরকার জাটকা নিধন রোধে ২০০৬ সালে দেশের অভয়াশ্রমগুলোয় নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকবে। বিকল্প হিসেবে মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেকে সরকার ২০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দেয়া হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ায় ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৯২ শতাংশ বেড়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় কেউ যাতে ইলিশ আহরণ করতে না পারে সেজন্য জল, স্থল ও আকাশপথে পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। দাদনদার মৎস্য আড়তদারদের চাপে ও পেটের দায়ে জেলেদের যেন নদীতে নামতে না হয়, সেজন্য প্রত্যেক বছরের মতো এবারও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের সব মৎস্য ঘাটে প্রশাসনের যৌথ তৎপরতা থাকবে। নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি পালন করা গেলে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো অনেক বেশি ইলিশ আহরণ করা সম্ভব হবে। বাজারেও সস্তায় ইলিশ পাওয়া যাবে। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকা। উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে যে পরিমাণ ইলিশ ডিম দেয়, তার মাত্র ১০ শতাংশ বাঁচলে প্রতি অর্থবছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হওয়ার কথা। দেশে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ জেলে। এছাড়া এ খাতে পরোক্ষভাবে জড়িত ২৫ লাখ মানুষ।

এই নিষেধাজ্ঞা না মানলে সংশ্লিষ্ট আইনে কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। নিয়মিত চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা। দেশের অভ্যন্তরীণ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকা এবং নদনদীতে মা-ইলিশ রক্ষায় সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করবে নৌবাহিনীর জাহাজ। গত দুই বছরের মতো এ বছরও এসব জাহাজ অভিযানের অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া অঞ্চলে বিশেষ টহল দেবে। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুসাধু। বাংলাদেশের ইলিশ প্রতিবেশী ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। ফলে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসে ইলিশ মাছে স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়া ইলিশ এখন রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রীর অংশ। আমাদের দেশে যেসব বিদেশি মেহমান আসেন তারা খাবারের মেন্যুতে ইলিশ মাছের আইটেম খুঁজেন। অতিথি আপ্যায়নে ইলিশ মাছের কোনো জুড়ি নেই। সে কারণে ইলিশ মাছের প্রজনন সময়টা এই মাছের জন্য নিরাপদ করা গেলে মানুষ সারা বছর পর্যাপ্ত পরিমানে ইলিশ মাছ পাবে। ইলিশ মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব। সে কারণে কেবল ব্যক্তি জীবনে নয়, জাতীয় জীবনের প্রয়োজনে ইলিশ মাছ রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত