ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুুস্থ্য ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে ডিম

কর্মসংস্থানে গার্মেন্টের পরই পোল্ট্রি
সুুস্থ্য ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে ডিম

ডিমকে বলা হয় পরিপূর্ণ খাদ্য। বিশ্বে যে কয়টি খাদ্যকে সুপার-ফুড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় ডিম সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে গত বছর ডিমের বার্ষিক প্রাপ্যতা বেড়ে মাথাপিছু ১৩৬টি থাকলেও এ বছর একটি কমে ১৩৫টিতে নেমেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪ দশমিক ২৪ কোটি পিস। ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার সংখ্যা ছিল ১২১টির বেশি। বর্তমানে দেশে ডিমের বার্ষিক চাহিদা এক হাজার ৮০৬ কোটি পিস, এর বিপরীতে উৎপাদনের সংখ্যা দুই হাজার ৩৩৭ কোটি পিস। এ হিসাবে জনপ্রতি বার্ষিক ডিমের প্রাপ্যতা দাঁড়িয়েছে ১৩৫টি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টিমান অনুসারে, সুস্থ থাকতে প্রতিটি মানুষের বছরে ন্যূনতম ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। তবে এর বেশি খেলেও ক্ষতি নেই বলে জানিয়েছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। ২০১৭-১৮ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ১৫৫২ কোটি, ২০১৮-১৯ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ১৭১১ কোটি, ২০১৯-২০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ১৭৩৬ কোটি এবং ২০২০-২১ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ২০৫৭ দশমিক ৬৪ কোটি। সরকারি এ পরিসংখ্যানে ডিম বলতে পোল্ট্রি ডিম, দেশি মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম, কোয়েল ও কবুতরের ডিমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা মহামারির পর থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও ব্যাহত হচ্ছে। তবে এখন ধীরে ধীরে সে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। আগামী বছর নাগাদ মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। ডিম উৎপাদনে ছোট ও বড় খামারে বাংলাদেশে মোট যে পরিমাণ বাণিজ্যিক পোল্ট্রি ডিম উৎপাদিত হয় তার মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ উৎপাদন করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিচিত খামারগুলো। অর্থাৎ দেশের ৮৮ থেকে ৯০ শতাংশ ডিম আসে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামার থেকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দশকে বিশ্বে ডিমের উৎপাদন প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন ভিয়েনা কনফারেন্স থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে একটি ইতিবাচক ক্যাম্পেইন। যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের প্রয়োজনীয়তার বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পালন করা হয় ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। যা ছিল ১৮তম বিশ্ব ডিম দিবস। এরপর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়ে আসছে। পুষ্টিবিদদের মতে, ডিম খেতে কোনো বয়স লাগে না। জন্মের আগে থেকেই মায়ের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের মধ্য দিয়ে ডিমের কার্যকারিতা শুরু হয়। এরপর জীবনের প্রতিটি ধাপেই মানুষের দরকার হয় ডিমের পুষ্টি। শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং জীবনের বাকিটা সময় শরীরের জন্য মূল্যবান অত্যাবশ্যকীয় আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের কোনো তুলনা হয় না। ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ এমন একটি প্রাকৃতিক আদর্শ খাবার বিশ্বে খুব কমই আছে। জানা গেছে, ডিমের বৈশ্বিক উৎপাদনে এশিয়া মহাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ডিম উৎপাদনকারী দেশ চীন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প। গার্মেন্ট শিল্পের পর সবচেয়ে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এ খাত। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে পোল্ট্রি শিল্পে- যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী। মাত্র চার যুগের ব্যবধানে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর খাতটি এখন অনেকটাই আত্মনির্ভরশীলতার পথে। বর্তমানে পোল্ট্রি মাংস, ডিম, একদিন বয়সি বাচ্চা এবং ফিডের শতভাগ বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দৈনিক ডিম উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ছয় কোটি ৪০ লাখ। পোল্ট্রি মাংস উৎপাদিত হচ্ছে বছরে প্রায় ৩৮ লাখ মেট্রিক টন। ডিম উৎপাদনকারীরা বলছেন, বাজারে অন্যান্য আমিষ ও সবজিজাতীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে ভোক্তাদের কাছে সাশ্রয়ী আমিষ হিসেবে ডিমের চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পশুখাদ্যের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খরচ, পরিবহণ খরচ, সর্বোপরি ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ কমায় ডিমের গড় উৎপাদন খরচ বেড়ে বাদামি ডিমের ক্ষেত্রে ১০ টাকা থেকে ১০ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছেছে। বিরূপ আবহাওয়া ও বিভিন্ন কারণে ডিমের উৎপাদন সাময়িকভাবে হ্রাস পেলেও তা আবারো স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সমৃদ্ধ জাতি গড়তে হলে পুষ্টিসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টিসম্মত খাবারের অন্যতম উপাদান ডিম। ডিমের প্রয়োজনীয়তা গ্রামগঞ্জসহ সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষ যেন বুঝতে পারে, খাবারের শ্রেষ্ঠতম একটা উপকরণ হলো ডিম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত