ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘরে তৈরি খাবারের ব্যবসা

নারীর কর্মসংস্থানের চমৎকার সুযোগ
ঘরে তৈরি খাবারের ব্যবসা

কর্মব্যস্ত জীবনে অনেক মানুষ হোটেল-রেস্টুরেন্টে গিয়ে দিনে-রাতের খাবার খেয়ে থাকে। শহর জীবনে কেউ কেউ তিনবেলাই হোটেলের খাবার খান। তবে বাসার তৈরি খাবার আর হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবারের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য না থাকলেও মানুষের একটা ধারণা : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে হোটেলে খাবার তৈরি করা হয় না এবং বাসি এবং মানসম্মত নয়, এমন খাবার হোটেল-রেস্টুরেন্টে পরিবেশ করা হয়। হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবারের আরেকটা নেতিবাচক দিক হচ্ছে, যেখানে রান্না করা হয় এবং যারা খাবার তৈরি করেন, তার ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তাই মানুষ ঘরের খাবারের প্রতি বেশি মনোযোগী হন। তবে ঘরের খাবার তৈরি করার মতো সময় ও সুযোগ আমাদের সমাজের কতজনের রয়েছে- সেটা ভেবে দেখা দরকার। অনেক অফিসে দুপুরে বাসা থেকে রান্না করা ভাত-তরকারি পরিবেশন করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা এ কাজটি করে থাকেন। তারা প্রতিদিনের খাবারের বিল সংগ্রহ করে বাজার করে, পরের দিনের খাবারের জিনিসপত্র কিনে বাসায় ফেরেন। সংসারের কাজের ফাঁকে সকাল বেলা ভাত-তরকারি রান্না করে দুপুরের আগে পৌঁছে দেন অফিস কিংবা দোকানে। কর্মব্যস্ত মানুষ হোটেলের তুলনায় কম দামে বাসার খাবার খেয়ে আত্মতৃপ্তি বোধ করেন।

রাজধানীর মতিঝিলে দুপুরের দিকে ভ্যানে করে টিফিন-বাটিতে এসব খাবার বিক্রি করা হয়। আবার অনেক নারী আছেন, তার বাসায় বসে শুকনো খাবার তৈরি করে তা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। সংসার জীবনে নারীদের যেহেতু ঘরের কাজ সামাল দিতে হয়- সে কারণে অনেক নারীর চাকরি করার সুযোগ থাকলেও তারা তা করতে পারেন না। তবে সংসারের কাজের ফাঁকে তারা হোমমেড ফুড বিক্রি বেশ আয় করতে পারেন। অনলাইনে এসব হোমমেড ফুড বিক্রি করে লাভের টাকা দিয়ে সংসারের কাজে ব্যয় করতে পারেন। খাবার ভালো হলে অল্প দিনের মধ্যে খ্যাতি ও যশ বেড়ে যাবে এবং মানুষ হোমমেড খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন- আমাদের নারী সমাজের অনেকে। তবে এক্ষেত্রে স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা বড় বেশি দরকার। সংসারে বাড়তি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে যেসব নারী এই ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, তারা সাফল্যের মুখ দেখতে পারেন। সুন্দর একটি নামে ফেসবুক পেইজ খুললে তারা রাতারাতি গ্রাহক জোগাড় করে নিতে পারবেন। পেইজের মাধ্যমেই খাবারের অর্ডার নিয়ে নিজে কিংবা অন্য কারো সহযোগিতায় জায়গামতো খাবার পৌঁছে দিতে পারেন। প্রতি মাসে যে আয় হয়, তা দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া ও সংসারের অত্যাবশকীয় খরচ মেটানো সম্ভব। এতে স্বামীর ওপর আর্থিক চাপ কম পড়বে। আর্থিক সচ্ছলতা থাকলে সংসার জীবনে প্রশান্তি নেমে আসে। পারিবারিক রান্না-বান্নার পাশাপাশি বিশেষ করে বিভিন্ন আইটেমের হালুয়া, আচার, নাড়ু ও শুকনা পিঠা তৈরি করা সম্ভব। এসব খাবার মজাদার হওয়ায় পরিবারের সদস্যরাও তা খেয়ে খুশি হন এবং তারা এসব খাবার তৈরির কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। হাতে তৈরি এসব খাবার কুরিয়ারের মাধ্যমেও দেশের যে কোনো স্থানে পাঠানো যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্ডার গ্রহণ এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকাও পাঠানো যায়। এ কাজটি করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এবং আগ্রহ। এই আগ্রহ এক সময় সখে এবং পরবর্তী সময়ে নেশায় পরিণত হয়। আর একবার ব্যবসায়িক নেশা মাথায় চেপে বসলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। নিজ প্রচেষ্টায় প্রথম থেকে দুই ও তিন রকমের খাবার বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি শুরু করে দিলেই হলো। ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রশংসা অর্জন করতে পারলেই কাজ করার আগ্রহও বেড়ে যাবে। তখন লাভের পরিমাণও বাড়তে থাকবে। অর্ডারের খাবার মানসম্মতভাবে এবং সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে পারলে সুনাম ও খ্যাতি বাড়তে থাকবে। ফলে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হতে পারেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত