শব্দহীন এক মিনিট কর্মসূচি

দূষণ রোধে হতে হবে সচেতন ও দায়িত্বশীল

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর ১১টি স্থানে গতকাল সকালে একটি ব্যতিক্রম ধর্মী কর্মসূচি পালন করা হলো। এ কর্মসূচি পালনকালে অনেকে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে রাস্তা অতিক্রম করেন। আবার অনেকে ধৈর্যের সঙ্গে এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। যারা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তাদের ধন্যবাদ। কেননা, শব্দদূষণ আমাদের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর, তা এ ধরনের কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়ার আগে সাধারণ মানুষ হয়তো অনুধাবন করতে পারত না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষিত শব্দহীন এক মিনিটের কর্মসূচি ক্ষণিকের জন্য হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। শব্দহীন এক মিনিটের কর্মসূচি পালনের আগে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সারা দেশে এখন শব্দদূষণ বেড়েছে। তবে রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যানজট ও ট্র্যাফিক রুলস না মানায় শব্দদূষণ বেশি হচ্ছে। শব্দদূষণের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে এ ব্যাপারে আইন থাকলেও সরাসরি আইন প্রয়োগ করে শব্দদূষণ কমানো সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার জনসচেতনতা সৃষ্টি। আর সে জন্যই শব্দহীন এক মিনিট কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে।

শব্দহীন কর্মসূচি শুরুর আগে জনসচেতনতায় মোটরসাইকেল এবং গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়। মোটরসাইকেল চালকের দাবি, সবাই যদি ট্র্যাফিক রুলস মানে, তাহলে তাদের হর্ন বাজানোর প্রয়োজন পড়বে না। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে শব্দহীন থাকার অনুরোধ জানানো হয় এসব কর্মসূচিতে। তবে পরিবেশ দূষণ এক রকম বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছে। ধূলা দূষণ একটি অন্যতম পরিবেশ দূষণ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। বায়ুতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, সীসা, তামা, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, ধূলিকণা ইত্যাদি থাকে। প্রত্যেকটি উপাদানের একটি সহনীয় মাত্রা রয়েছে। কোনো উপাদান এই মাত্রার বেশি বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম থাকলে সেটা বায়ু দূষণের পর্যায় পড়ে। ঘূর্ণিহাওয়া, ধুলা ও বায়ু দূষণের প্রভাবে সর্দি-কাশি, আমাশয় ও নানা ধরনের রোগব্যাধি আক্রমণ করছে। বাড়তি হয়ে এসেছে বিষণ্ণতা, ক্ষোভ ও উদ্বেগ। হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে গিয়ে খিটমিটে হওয়া ইত্যাদি। মনের ভেতরে ভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। কঠিন হয়ে পড়েছে কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখা।

প্রচণ্ড অস্থিরতার মধ্যে রুক্ষ ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সনাতনি পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রাজধানীর ধূলিদূষণ রোধে ব্যবস্থা নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। মূলত রাজধানীকে পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য রোগমুক্ত নগরী গড়ে তুলতেই শব্দদূষণ ছাড়াও অন্যান্য দূষণমুক্ত রাখার উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। বর্তমানের রাস্তা পরিষ্কারের পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে বাদ দিয়ে আধুনিক সুইপিং মেশিন দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা শহরে ধূলিদূষণ মাত্রার চেয়ে অপেক্ষা তিনগুণেরও বেশি। ঢাকা শহরের ধূলিদূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে- পার্শ্ববর্তী এলাকার বিদ্যমান ইটভাটা, খোলা অবস্থায় নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা ও যানবাহন। রাজধানীকে একটি বসবাসের নগরীতে পরিণত করতে শুধু সরকারের ওপর দায়িত্ব দেয়া উচিত হবে না। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।