বাংলার কৃষি খাদ্যে সমৃদ্ধি

প্রধান চার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ১২ পণ্যে শীর্ষে

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে গতকাল পালিত হলো বিশ্ব খাদ্য দিবস। দিবসটির পালনের প্রাক্কালে দেশ চাল ও মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মধ্যদিয়ে ভাতে-মাছে বাঙালি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাংস ও সবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। এছাড়া ১২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য। আর জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম একটি লক্ষ্য হলো- খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতাণ্ডপরবর্তী ৫২ বছরে বাংলাদেশে প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে তিন থেকে পাঁচগুণ। গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি খামার। চাল, মাছ, মাংস ও সবজি উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী দেশ। পোলট্রি শিল্পে গত ১০ বছরে দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০০ শতাংশ। ২০১০ সালে হাঁস-মুরগির শিল্পে উৎপাদন আয় ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। যা বেড়ে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটিতে পৌঁছেছে। দেশের প্রায় ১ দশমিক ৬৫ লাখ মানুষ ডিম ও মাংস উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। দেশে এখন মোট ৮১ হাজার ৬১৪টি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে।

একজন ব্যক্তির শরীরে দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা থাকে। ২০১৭ সালেই সে চাহিদা পূরণ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭৫ লাখ টন সাদা ও লাল মাংস উৎপাদন করেছে। যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৬০ লাখ টন। সে হিসাবে গত ১০ বছরে মাংস উৎপাদন প্রায় ছয়গুণ বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। আর ১৫ বছরে ভুট্টা উৎপাদন বেড়ছে প্রায় ৯ গুণ, আলু ২ গুণ, ডাল ৪ গুণ, তেলবীজ ২.৫ গুণ ও সবজি ৮ গুণ। ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম। গত ১৫ বছরে বৈরী পরিবেশ সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯৯টি উন্নত বা উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন ও ৭০৮টি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে ধানের জাত ৮০টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭১১ কোটি পিস। এখন তা ২ হাজার কোটি পিস ছাড়িয়েছে। বার্ষিক মোট ১ কোটি ৫২ লাখ টন দুধের উৎপাদন প্রয়োজন। গত অর্থবছরে মোট উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা ছাড়াও বেসরকারি বিনিয়োগ দুগ্ধ খাতকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে দুধের উৎপাদন তিনগুণ বেড়েছে। মাংসের তুলনায় দুধ ও ডিমের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশীয় বাজারের ৫৬ শতাংশ দখল করে আছে চাষ করা মাছ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৪৩ লাখ টন মাছ উৎপাদন করা হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ টন। বর্তমানে তা বেড়ে ৫৪ লাখ টন ছাড়িয়েছে। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ খোলা মৎস্য চাষে তৃতীয় ও অভ্যন্তরীণ চাষ করা মৎস্য সংস্কৃতিতে পঞ্চম স্থানে আছে বাংলাদেশ। গত ২ বছরে সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদনে মূল ভূমিকা পালন করছে ইলিশ মাছ। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশে ৪ দশমিক ৯৮ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে ৫ দশমিক ১৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। এ বছর তা ৬ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ চাল ও শাকসবজি উৎপাদনে কয়েক বছর আগেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৮৬ কোটি টন চাল উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ দিন দিন কৃষিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের যে কোনো অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর তাগিদ দিচ্ছেন এবং মানুষ তার নিজেদের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদার কথা মাথায় রেখে খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ তরতর করে উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে যাবে।