নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধার

তৎপর হতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। সীমান্ত দিয়ে আসা এসব অস্ত্র দৃর্বৃত্তদের হাতে পৌঁছে যায়। এই অবৈধ অস্ত্র নিয়ে একটি চক্র ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অনেকেই নির্বাচন চলাকালে দুর্বৃত্তদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করার জন্য গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। নির্বাচনের আগে দেশের বাইরে থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করার কাজে একটি চক্র সক্রীয় থাকে। কথিত রয়েছে জাতীয় নির্বাচনের আগে অস্ত্রের বেচা-বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। পাবলিক পরীক্ষার আগে যেমন সারা দেশের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয় তেমনি নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার পর অস্ত্র বেচা-কেনার দোকানগুলো বন্ধ রাখা যায় কি না সেটা বিবেচনায় আনা যেতে পারে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা জোরদার করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সীমান্ত দিয়ে দেশে অস্ত্র আসছে এবং এসব অস্ত্র ব্যক্তি বিশেষের কাছে জমা হচ্ছে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। আর এসব গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযান চালাতে হবে। এছাড়া বৈধ অস্ত্র যাতে কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা নয় হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযানে উদ্ধার কিংবা জব্দ হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে গোয়েন্দারা সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে অস্ত্র আসার তথ্য পায়। এভাবে অস্ত্র আনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে গোয়েন্দাদের আরো বেশি তৎপর হতে হবে। কাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সীমান্ত পার হয়ে অস্ত্রগুলো দেশে ঢুকছে সে বিষয়েও কড়া নজরদারি রাখা প্রয়োজন। সীমান্ত পার হয়ে অস্ত্রগুলো ঢাকায় আসার পর এসব অবৈধ অস্ত্র রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন লোকজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। অবৈধ অস্ত্র দেশে কীভাবে ঢুকছে, কাদের ছত্রছায়ায় ঢুকছে, সেসব বিষয় সম্পর্কেও পুলিশকে অনুসন্ধান করতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। কারা অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতা তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি কোনো বৈধ ব্যবসায়ী অবৈধ অস্ত্রের কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তাদের ব্যাপারে নজরদারির পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। এসব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বা অবৈধ অস্ত্র সীমান্ত পার করে দেশে ঢুকাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেবল ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নয়, সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নামতে হবে। গোয়ন্দা তৎপরতা বাড়ানোর মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া মাত্রই অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যারা এসব অবৈধ অস্ত্র কিনবে বা বিক্রি করবে সবাই সমান অপরাধী। এদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারা অস্ত্রের অর্ডার করছে বা কাদের কাছে অস্ত্র যাচ্ছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে। অনেকে বৈধ অস্ত্র দিয়ে মানুষকে হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখানোর মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (গোয়েন্দা) বিভাগ জানিয়েছে, যাদের কাছে বৈধ অস্ত্র রয়েছে, নির্বাচনের আগে তারা যেন সেগুলো থানায় জমা দেন, যদি তারা অস্ত্র থানায় জমা না দেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে বলা হয়েছে, কেউ যদি নির্দেশ অমান্য করে বা তাদের বৈধ অস্ত্রগুলো জমা না দেন, তবে এটা এক ধরনের অপরাধ হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করবে এবং তাদের অস্ত্র নিয়ে আসবে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হবে। নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। নির্বাচনের আগে কিংবা নির্বাচন চলাকালে অনেকে বৈধ কিংবা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হয়। নির্বাচনের সময় অস্ত্রধারীদের ‘কদর’ বেড়ে যায় এবং তারা প্রার্থীর ভাড়াটিয়া হিসেবে কাজ করে। ভোট কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় তাদের নীরব কিংবা সরব উপস্থিতি ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক জন্ম দেয়। ফলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেজন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে।