সব সময় বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে শেখ রাসেল

মো. হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী, ডেপুটি রেজিস্ট্রার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির মহানায়ক, বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নাম অনুসারে তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন রাসেল। বংশের পদবিসহ যা দাঁড়ায় শেখ রাসেল। মাত্র দেড় বছর বয়স থেকে ছোট্ট শেখ রাসেল তার প্রিয় পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যেতেন। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার দায়ে এবং পরবর্তীতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে বন্দি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে নিঃশর্ত মুক্তিলাভ করলেও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলে ৭ বছর বয়সি শেখ রাসেল তার মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং বড় দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনার সঙ্গে পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হয়ে ধানমন্ডির ১৮ নাম্বার সড়কের একটি বাড়িতে আটক থাকেন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে ১৭ ডিসেম্বর পরিবারের সবার সঙ্গে মুক্ত হন। শেখ রাসেল খুব কম খেতেন, তবে তার পছন্দের খাবারের তালিকায় সবার প্রথম ছিল ভাত। তিনি বাসার কাজের লোকের সঙ্গে রান্নাঘরে পিড়িতে বসে লাল ফুলের ছাপা থালায় খেতে পছন্দ করতেন। তিনি সাইকেল চালাতে ভীষণ পছন্দ করতেন। প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হয়েও তিনি প্রটোকল ভেঙে নিজে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতেন। সাইকেলের পাশাপাশি মপেট মোটরসাইকেল ছিল তার। পাশের বাসার আদিল ও ইমরান ছিল তার খেলার সাথী। তবে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গেলে গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে ডামি বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতেন। বড় হয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। তবে বড় কালো পিঁপড়াকে ভীষণ ভয় পেতেন। কালো পিঁপড়াকে তিনি ভুট্টো বলে ডাকতেন। তিনি পায়রা পুষতেন এবং বড়শি দিয়ে মাছধরা পছন্দ করতেন। প্রিয় কুকুর টমিকে নিয়ে খেলা করতেন। তিনি সবসময় সুন্দর পোশাক পরতে পছন্দ করতেন এবং প্রিন্সকোর্ট ছিল তার অন্যতম পছন্দ। তিনি ১৯৭৩ সালে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জাপান সফর করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় হায়েনাদের গুলিতে বাবা-মা, ভাই-ভাবিসহ পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন ১৭ জনের সঙ্গে শাহাদাৎবরণ করেন। বনানী কবরস্থানে পরিবারের কয়েকজন সদস্যদের সঙ্গে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদরের কনিষ্ঠসন্তান শেখ রাসেল। তার জন্মদিন ১৮ অক্টোবরকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সাল থেকে শেখ রাসেল দিবস ঘোষণা করেছে। তার স্মরণে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সরকার প্রতিটি মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করেছেন। প্রয়াত শেখ রাসেল শুধু স্কুল এবং খেলার মাঠে নয়, সব সময় বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে।