ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাসপাতালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার

মৃত্যু পথযাত্রীর সেবার পরিধি বাড়াতে হবে
হাসপাতালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার

মৃত্যু পথযাত্রীদের সেবায় প্রয়োজন প্যালিয়েটিভ কেয়ার। বিশ্বে প্রতি বছর ৫ কোটি ৭ লাখ মানুষের প্যালিয়েটিভ সেবার দরকার হয়। যার মধ্যে ৩ কোটি ১ লাখ মানুষের প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ২ কোটি ৬ লাখ মানুষের জীবনের শেষের দিকে এ সেবা প্রয়োজন হয়। এর প্রায় ৬৭ শতাংশ ৫০ বছরের বেশি বয়সি। আর এরই মধ্যে কমপক্ষে সাত শতাংশ শিশু। তবে সারাবিশ্বের এ চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম পূরণ করা সম্ভব হয়। রাজধানী ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস পালন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বলা হয়, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে প্রচারণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিস্তার ঘটানোই দিবসটির মূল লক্ষ্য। প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি নাগরিক অধিকার। যে কোনো মানুষের যেকোনো সময় এ সেবার প্রয়োজন হতে পারে। নিরাময় অযোগ্য রোগীর ক্ষেত্রে রোগের যেকোনো সময় বা বয়স থেকেই রোগী এবং তার পরিবারের দৈনন্দিন কষ্টগুলোকে কমিয়ে আনা এবং জীবনের মানোন্নয়নে সহায়তা করাই এ সেবার মূল উদ্দেশ্য। প্যালিয়েটিভ কেয়ার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত বা দেরি করায় না, বরং মৃত্যুকালীন ভোগান্তি লাঘবে চেষ্টা করে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষের জীবনের শেষ সময়ে উপশমকারী যত্ন প্রয়োজন। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এ সেবা এখনো অনুকূলে নয়। বিশ্বব্যাপী প্যালিয়েটিভ কেয়ারের চাহিদার ১২ শতাংশেরও কম মেটানো সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বছরের যে কোনো সময় লাখো মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন। সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে মাত্র অল্প কিছু স্থানে এ সেবার প্রচলন আছে। তবে সব হাসপাতাল না হলেও জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে এই সেবা থাকার দরকার। কেননা, সহানুভূতির সঙ্গে, মমতার সঙ্গে, মুমূর্ষু মৃত্যু পথযাত্রীদের সেবাদানই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মূখ্য উদ্দেশ্য। কোনো না কোনো নাগরিকের একদিন হয়তো এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবার দরকার হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করেছে। যার অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৮ এ উল্লিখিত সর্বজনীন পরিধি স্বজনের অন্যতম প্রধান অংশ এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার। প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের পক্ষ থেকে চিকিৎসক, নার্স, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারী, স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি রোগীর পরিবার বা পরিচর্যাকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সমাজে অনেকেই রয়েছেন, তারা মৃত্যু পথযাত্রী। চিকিৎসকের দেয়া সময় অতিক্রম করার মধ্যদিয়ে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার জন্য তারা অপেক্ষা করতে থাকেন।

সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, যিনি মারা যাবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তার প্রতি পরিবারের সদস্যরা হয় বেশি খেয়াল করেন অথবা করেন না। তার ডাকে কেউ সাড়া দিলে প্রশান্তির। আর না দিলে দুভার্গ্যরে। একা কতক্ষণ শুয়ে বসে থাকা যায়। ঘুম না এলেও চোখ বুজে চুপচাপ থাকতে বলা হয়। পরিবারের কোনো সদস্য হয়তো ধমকের সুরে কথা বলেন। নিরুপায় হয়ে বাসার আবদ্ধ অবস্থায় তাকে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে সময় অতিবাহিত করতে হয়। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনার জন্য ওই ধরনের রোগীকে খাবার কম দেয়া হয়। জীবনের শেষ সময় ‘ভালোমন্দ’ খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করার শক্তি ও সাহস তারা হারিয়ে ফেলেন। যাদের আত্মীয়-স্বজন এই ধরনের মৃত্যুপথ যাত্রী তারা হয়তো বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারবেন। চলাফেরার অক্ষমতার কারণে দিনে-রাতে সব সময় নিঃসঙ্গ জীবন কাটানোর মতো কষ্ট আর হতে পারে না। নিজে এবং পরিবারের সদস্যরা তার আশু মৃত্যু কামনা করেন। গ্লানিকর এই পরিস্থিতি থেকে মৃত্যুপথযাত্রীকে হাসপাতালের পরিবেশে রাখলে এবং রোগের যন্ত্রণা উপশম হয়, এমন ওষুধ দিয়ে তাকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সুযোগ করে দেয়া গেলে একজন মানুষ কিছুটা হলেও শান্তিতে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারে। এই দুনিয়ায় লালিত-পালিত হয়ে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। মানুষ কখন মারা যাবে, সেটা যদি অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়, তাহলে তিনি মৃত্যুর আগে আধামরা হয়ে যান। তাই এ অবস্থায় একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে মানসিকভাবে সবল রাখার জন্য বাস্তব অবস্থায় এ ধরনের সেবাশ্রমের বিস্তার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত