ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইজিবাইক সড়কের জন্য কতটুকু নিরাপদ?

মাহবুব আলী
ইজিবাইক সড়কের জন্য কতটুকু নিরাপদ?

সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘটনায় কোনো না কোনোভাবে ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা এসে গেছে। কোথাও সরাসরি ট্রাক বা পিকআপ বা বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ, কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা ইজিবাইকের পেছনে ভারী যানবাহনের ধাক্কা, অন্য কোথাও ইজিবাইকের ওভারটেক প্রবণতা, ইত্যাদি। আমরা দেখেছি, ইজিবাইকের যাত্রী হিসেবে থাকা ছয় থেকে সাতজন এক মুহূর্তে নিহত হয়েছেন। কোথাও কোথাও আবার এরা একই পরিবারের সদস্য। এইসব মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা পরিবারগুলোয় যেমন প্রিয়জন হতাহতের কারণে শোকের আবহ তৈরি করে রাখে, তেমনই সমাজজীবনে রেখে যায় অনেক সমস্যা এবং প্রশ্ন। কেন এত প্রাণহানী? কেন কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই? সব দোষ কি রাস্তা ব্যবস্থার? ইত্যাদি। বলাবাহুল্যগুলো কারণের সঙ্গে সঙ্গে ইজিবাইক অব্যবস্থাপনার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা যেমন আকস্মিক ও অনভিপ্রেত, তারপরও ঘটছে এবং মূল্যবান জীবন বিনাশ হয়ে চলেছে। অনেকেই সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্বের কারণে বরণ করে নিচ্ছেন অসহায়-পরনির্ভরশীল করুণ জীবন। বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যা আধিক্যের দেশ। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে কর্মের কারণে হোক বা যোগাযোগের প্রয়োজনে যানবাহনে ওঠেন, রাস্তায় হাঁটেন, কিন্তু কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেন না যে, তার যাত্রা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। জীবন নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন। মানুষজনের সড়ক বা রাস্তায় গমনাগমন ও হাঁটাচলায় অনেক সচেতনতা এসেছে। ট্রাফিক আইন জানেন না, এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল; কিন্তু সতর্কতা এবং আইন অনুসরণে মাঝেমধ্যে অনীহা বা অবহেলা দেখা যায়। আবার এও সত্য, একজন ব্যক্তি সবকিছু জেনেবুঝে রাস্তায় হাঁটছেন বা সাইকেল চালাচ্ছেন, অথচ অন্য কারো বেপরোয়া চলাচলের কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন। আজকাল প্রায়শ আমরা খবরে পড়ি যে, ইজিবাইককে বেপরোয়া গতিতে বাস বা ট্রাক পেছন দিক থেকে আঘাত করলে উক্ত হালকা যানবাহনের সব যাত্রী মারা গেছেন। দুর্ঘটনা মাত্রই বিয়োগান্ত ও দুঃখজনক। মর্মন্তুদ এইসব ঘটনায় দেখা যায়, নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য, যার মধ্যে শিশু ও মহিলার সংখ্যা বেশি। নিঃসন্দেহে এমন দুর্ঘটনার খবরও পাঠকের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একটি প্রাণ অনেক মূল্যবান। একটি জীবন অনেক সম্ভাবনার। আবার একজন মানুষ পরিবারের সব সদস্যের মুখে দু’মুঠো খাবার জোগানের একমাত্র মানুষ। সুতরাং যে কোনো মূল্যেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ বা নিরসন করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিষয় বিশেষজ্ঞগণ বলে থাকেন যে, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, সড়ক আইন অমান্য করা ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, সড়কের নির্মাণ ত্রুটি, রাস্তার সংস্কার না হওয়া, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল ইত্যাদি অনেক কারণ আছে। আইনের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ারও দোষত্রুটি আছে বলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের সোচ্চার বক্তব্য রয়েছে। এ ছাড়া রাস্তায় ফুটপাত দখল, রাস্তার উপর দোকানপাট-হাটবাজার, নিবন্ধনবিহীন চালক, চালকের মাদকাসক্তি, যানবাহন চালনার পাশাপাশি অন্যত্র মনোযোগ, চালকের শরীরিক সমস্যা, বিশেষ করে রাত জেগে যানবাহন চালনায় ক্লান্তি ও তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়া বা ঘুমিয়ে যাওয়া, খোলা রেলক্রসিং ইত্যাদি অনেক কারণ অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে। এসবের মধ্যে থ্রি-হুইলার, মোটরচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকও কম দায়ী নয়। আমরা এখানে ইজিবাইক ব্যবস্থাপনায় আলোকপাত করতে চাই। আমরা জানি বিগত ১০ থেকে ১৫ বছরে দেশে দ্রুতগতিতে কায়িক শ্রমে চালিত রিকশার জায়গায় ব্যাটারিচালিত লাখ লাখ ইজিবাইক বা অটোরিকশা এসেছে। এসব নতুন-পুরাতন ইজিবাইকের সঠিক সংখ্যা কত হতে পারে, সেটি সংশ্লিষ্টদের তথ্য-উপাত্তে নেই। দেশের ৬৪ জেলায় কতসংখ্যক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বা অটোরিকশা চলে, সেটি রাস্তায় দৃষ্টি দিলে সহজেই বোঝা যায়। এইসব ইজিবাইক সারাদিন রাস্তা জ্যাম করে রাখে। বিশেষ করে মফস্বল শহরের বিভিন্ন রাস্তায়, মোড় এবং কেন্দ্রগুলোয় দেখা যায় অসহনীয় যানজট। এ হলো দৈনন্দিন জীবনের সহজ দৃশ্য। সরকার এবং নিরাপদ সড়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীদের অসতর্কতা-অমনোযোগিতা-অবহেলা এবং দায়হীন দায়িত্বের কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক তথ্যে জানা যায়, ২০০৭ সালে ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রথম প্রবেশ করে দেশে। এটি হালকা যানবাহন। ডিজেল বা পেট্রলচালিত নয়, বিধায় কার্বন-মনোঅক্সাইড বা বিষাক্ত ধোঁয়া ও কালি নেই, মূল্য কম বা সাশ্রয়ী, মানুষের খুব বেশি কায়িক শ্রম লাগে না এবং প্রায় শব্দহীন চলাচল করে বিধায় শব্দদূষণও নেই। অল্প-বিস্তর দূরত্বের গন্তব্যে যেতে-আসতে সহজলভ্য ও সুবিধেজনক। এইসব কারণে ইজিবাইক যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সারা দেশের রাস্তায় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ ইজিবাইক চলাচল করছে বলে জানা যায়। ইজিবাইক হালকা যানবাহন, ব্যাটারি ইলেকট্রিক চার্জ করে নিয়ে ১২০ কিলোমিটারের মতো দীর্ঘপথও অতিক্রম করতে পারে। উইন্ডশিল্ডের পেছনে রয়েছে চালকের আসন। তার পেছনে দু’জনের আসন আছে। অবশ্য এই দেশে ইজিবাইকের দু’আসন সামনে একটি চওড়া পাটাতন দিয়ে আরো দু’জনের আসন তৈরি করা হয়ে থাকে। তারপরও মোট চার-পাঁচজন যাত্রীই নয়, সাত-আটজনও ইজিবাইকের যাত্রী হয়ে থাকেন। ইজিবাইক ব্যাটারি চার্জের জন্য শহর ও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় নতুন এক ব্যবসা বা পেশাজীবীর সৃষ্টি হয়েছে অর্থাৎ ইজিবাইক চার্জিং স্টেশন বা সেন্টার। এখানে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করা হয়। ইজিবাইকে চার থেকে পাঁচটি অ্যাসিড ব্যাটারি থাকে। এই ব্যাটারি চার্জ করা হলে যতক্ষণ চার্জ থাকে ইজিবাইক ততক্ষণ চলতে পারে। অভিযোগ শোনা যায় যে, এইসব চার্জিং স্টেশন বা সেন্টারের কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ বিভাগের একশ্রেণির অসাধু কর্মীর মাধ্যমে অবৈধ সংযোগের সুবিধায় বিদ্যুৎ চুরি করা হয়। কখনো বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত