জাগ্রত হোক মানবতা, বন্ধ হোক হামলা

গাজায় নিরীহ মানুষ হত্যায় বাংলাদেশেরও নিন্দা

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অবরুদ্ধ গাজায় মধ্য গাজার আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৮০০ জনে দাঁড়ানোর পর বিশ্ববিবেক হতবাক হয়েছে। হামলার পর চিকিৎসকদের সামনে ছটফট করতে করতে মানুষ মরতে থাকে। ইসরাইলি গোলায় অসংখ্য শিশুর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। হাসপাতালের চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে মানুষের আর্তনাদ। হাসপাতাল ও এর আশপাশে নারী-শিশুসহ মানুষের নিথর দেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে। হাসপাতাল ভবনের চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত মানুষ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরাইল সফরকালে গত বুধবার এই হামলা চালানো হয়। জো বাইডেনের এই সফরকালে মিশর থেকে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা নিয়ে যেতে বাধা না দেওয়ার ঘোষণা দেয় ইসরাইল। ২০০৭ সালে গাজায় হামাস নির্বাচিত হওয়ার পর কখনো অবরুদ্ধ গাজার কোনো হাসপাতালে এতটা ভয়াবহ হামলা চালানো হয়নি। হাসপাতালে ভয়াবহ এই হামলা পুরো বিশ্বকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এর জেরে নিন্দা ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। ৭ অক্টোবর ইসরাইলি হামলা শুরুর পর হাসপাতালে হামলা ছিল ভয়ংকর। জীবিতদের খোঁজে উদ্ধারকর্মীরা হাসপাতালে রক্তাক্ত ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে নিয়োজিত থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো মৃতদেহ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান নির্ভর করছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের নেতৃত্বে ঢাকায় অবস্থানরত ওআইসি সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা গত বুধবার রাতে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এই অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ সার্বক্ষণিক ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। আজ সারাদেশের সব মসজিদে ফিলিস্তিনিদের জন্য জুমার নামাজে বিশেষ মোনাজাত করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এর আগে ‘শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবজাতির কল্যাণে যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে গাজার একটি হাসপাতালে হামলায় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষ হত্যার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, যুদ্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা কখনই মানবজাতির জন্য ধ্বংসের পরিবর্তে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ সারাবিশ্বের শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হোক। তবে আমাদের দেশের রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি ইসরাইলি এই হামলার কোনো নিন্দা জানায়নি। গাজায় হাসপাতালে গত মঙ্গলবার বিমান হামলার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নেতারাও নিন্দা জানিয়েছেন। আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান মুসা ফাকি মাহামাত এই হামলার পর ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, গাজায় হাসপাতালে হামলা অযৌক্তিক এক ট্র্যাজেডি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হামলার নিন্দা করেন এবং যুদ্ধের আইন মেনে চলার ওপর জোর দেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনায় তারা শোকাহত। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি ইচ্ছাকৃত বোমা হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল হাসপাতালে এই বোমা হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছেন, বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ হামলায় নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো কোনোভাবে আইনসিদ্ধ নয়। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো বেসামরিকদের ওপর তিনি বলেছেন, এই হামলা নিন্দনীয়। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, নির্দোষ বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত অত্যাবশ্যক। ইন্দোনেশিয়া সরকার গাজায় হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজায় হাসপাতালে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।