আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি

পূরণ হোক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশা

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার আগামী ডিসেম্বরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন আইএমএফ তাদের বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ আগামী ১১ ডিসেম্বর অনুমোদন পেতে পারে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের শেষ বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানিয়েছেন, আইএমএফের বেশকিছু শর্ত ছিল। এরই মধ্যে ৬টি শর্ত নিয়ে কাজ করেছি আমরা। শর্তের বেশকিছু সফল হয়েছে। কিছু পূরণ হয়নি। তবে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বেশকিছু বিষয়ে একমত হয়েছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যায়, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার আমরা পাব। আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ তাদের বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। মুখপাত্র বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু’একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ ও রাজস্ব আহরণ কিছুটা কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি প্রকাশ করেছে। রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি বিপিএমসিক্স অনুযায়ী, রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্যাকেজের আওতায় রিজার্ভ অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ, তা সংশোধনে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে আইএমএফ ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৫ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্যাকেজের আওতায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত, রাজস্ব সংগ্রহ, জ্বালানির স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয়সহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্য শিথিল করেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে রিজার্ভ ১৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী বছরের জুন শেষে ২০ বিলিয়ন ডলারে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ মিশন চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারকে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল, সেটিও কমাতে রাজি হয়েছে। তবে সরকারের প্রাইমারি ব্যালেন্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএমএফ। অর্থনীতিবিদরা ঋণ কর্মসূচির কিছু শর্ত শিথিলে আইএমএফের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, সতর্ক করে বলেছেন, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ছাড়া নতুন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করাও কঠিন হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পর আইএমএফ কিছু শর্তে নমনীয় হতে সম্মত হয়।

আইএমএফ বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। এর আগে গত ৪ অক্টোবর ঢাকায় আসেন আইএমএফের ঋণ পর্যালোচনা মিশনের সদস্যরা। এরপর তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের ঋণ পেলে আমাদের রিজার্ভ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হবে। বর্তমানের রিজার্ভ ঘাটতি থাকবে না। অর্থনৈতিক কমর্কাণ্ডে গতিশীলতা আসবে। তবে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানটি যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়ক। আমাদের দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান সাধারণত নিজ উদ্যোগে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ভেতর-বাইর থেকে চাপ সৃষ্টি না করলে কাজের গতি পায় না। এ ছাড়া নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকার প্রবণতাও আমাদের দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদ্যমান। সে কারণে কোনো তরিৎ সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আশা থাকবে- আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো পূরণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। ঋণ ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। অর্থের অভাবে অনেক ভালো উদ্যোগ ভেস্তে যায়। ঋণ নিয়ে যথাসময়ে পরিশোধ করার ইতিহাস বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি হয়নি। সে কারণে বিশ্ব ব্যাংকের মতো ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার করায় পরবর্তীতে অনুশোচনা বোধ করেছে। আইএমএফ’র বাংলাদেশে ঋণ দিতে আগ্রহী এবং তারাও বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে সহায়তা করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।