আবার ট্রেন দুর্ঘটনা

বন্ধ হোক সংকেত অমান্য করার প্রবণতা

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আবার ট্রেন দুর্ঘটনা, আবার হতাহতের ঘটনা। গত সোমবার বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব জংশনের কাছাকাছি জগন্নাথপুর রেলক্রসিং এলাকায় আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ও চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনের মধ্যে এ দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়। কেন এ দুর্ঘটনা তার নেপথ্যের কারণ কেন খুঁজে বের করে সুপারিশ অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হয় না সেটাই প্রশ্ন। এ দুর্ঘটনার কারণে অনুসন্ধানে এরইমধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো তিন দিনের মধ্যে পর্যবেক্ষণসহ একাধিক সুপারিশ হয়তো দেবে।

তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে কোনো তদন্ত কমিটির সুপারিশ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না। ফলে একই অপরাধ বার বার ঘটতে থাকে। গত ২২ অক্টোবর দেশে পালিত হলো জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার মাধ্যমে প্রাণহানির ঘটনা কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানানোর একদিন পরই এ দুর্ঘটনা ঘটল। এ দিবসটিতে ড্রাইভার ও হেলপারদের সচেতন হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অথচ দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তাহলে কি সচেতন হননি। ট্রেন ভ্রমণ অনেকটা ব্যয় সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ বলে মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হন। আমাদের দেশের সীমিত আয়ের মানুষের পছন্দের বাহন হচ্ছে ট্রেন। মানুষের ধারণা ট্রেন কম দুর্ঘটনায় পতিত হয়। অথচ তা হচ্ছে না। অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ সংকেত অমান্য করা। সংকেত মান্য কিংবা অমান্য করার বিষয়টি নির্ভর করে ট্রেন চালকদের ওপর। চালক যদি একটু সচেতন এবং দায়িত্ব পালনে দায়িত্বশীল হন তাহলে হয়তো ট্রেন দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সোমবার বিকালে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় উল্টে যায় আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগি। ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম প্রান্তে এগারসিন্দুর ট্রেনটির পেছনের তিনটি কোচে মালবাহী একটি ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের পেছনের দুটি কোচ উল্টে গিয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ- তিন পথে সাড়ে সাত ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ট্রেন বন্ধ থাকায় পথে পথে আটকে থাকে বেশ কিছু যাত্রীবাহী ট্রেন। এসব ট্রেনের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

রেল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, দুটি ট্রেন একই লাইনে বা একাধিক লাইনের মোড়ে আসার সুযোগই নেই। এ ক্ষেত্রে স্টেশনমাস্টার মালবাহী ট্রেনটিকে আউটারে থামার সংকেত না দিলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। থামার সংকেতবাতি দেওয়ার পরও চালক তা না মানলে দুর্ঘটনা ঘটে। মালবাহী ট্রেনটির চালক থামার সংকেত উপেক্ষা করে দ্রুত ট্রেনটি চালিয়ে এসে এগারসিন্দুর ট্রেনটিকে ধাক্কা দেন। মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ের কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনামতে, এগারসিন্দুর ট্রেনটি ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ঢাকার পথে আসছিল। আর মালবাহী ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনাটির সময় এগারসিন্দুর ট্রেনটি একলাইন থেকে অন্য লাইনে যাচ্ছিল। এগারসিন্দুর ট্রেনটি লাইন পরিবর্তনের জায়গা অতিক্রম করে ১১টি কোচ পার হয়ে যায়। তবে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রেনটি এগারসিন্দুরের শেষ তিন কোচে আঘাত করে। দুর্ঘটনার সময়ের দুটি ভিডিও পেয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এতে দেখা যায়, সামনে ট্রেন দেখে জোরে হর্ন বাজাচ্ছিল মালবাহী ট্রেনটি। তখনো এর গতি ছিল বেশি। কিন্তু পরে একেবারে যাত্রীবাহী ট্রেনে ধাক্কা দেওয়ার আগে কিছুটা গতি কমানো হয়। দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০১৮ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরো ১ হাজার ৩০২ জন। এ সময় রেল দুর্ঘটনা ঘটে ১ হাজার ১১৬টি। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেল দুর্ঘটনার একটা বড় অংশই লাইনচ্যুতির ঘটনা। এতে প্রাণহানি কম। তবে বেশিরভাগ প্রাণহানি হয় এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের সংঘর্ষ কিংবা রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায়। একটি দুর্ঘটনা একজন মানুষের পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতিও। তাই ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সচেতনতাই পারে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে।