ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

নদী দখলকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

এসএম খান
নদী দখলকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

দেশের এমন কোনো নদ বা নদী নেই যা অবৈধ দখলের কবলে পড়েনি। ফলে নদীগুলো স্বাভাবিক গতি হারিয়ে মৃত অবস্থায় উপনীত হয়েছে। নদ-নদীর অবৈধ দখল নিয়ে পত্রপত্রিকায় কম লেখালেখি হয়নি। তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। নদীরক্ষা কমিশন থাকলেও তা নখদন্তহীন। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কমিশন দেশব্যাপী অবৈধ নদী দখলকারিদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। গত ২১ জুন নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সংসদে জানিয়েছেন, সরকার ৫০ হাজারের বেশি অবৈধ দখলকারের তালিকা তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে নদী রক্ষা কমিশন ৬৪ জেলার ডেপুটি কমিশনারদের মাধ্যমে এ তালিকা তৈরি করে। নামের তালিকা কমিশনের ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা তৈরি করা হয়েছে ঠিকই, তবে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানা যায় না। শুধু নদ-নদী অবৈধ দখলই নয়, দূষণ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনও বন্ধ করা যায়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ দখল ও বালু উত্তোলনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাসীনদলের প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। যুগের পর যুগ ধরে নদ-নদীর অবৈধ দখল, দূষণ ও বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় দেশের কি ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে, তা এখন দৃশ্যমান। দেহের রক্তনালীর মতো প্রবাহমান নদীমাতৃক বাংলাদেশের সজিবতা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার, অন্যদিকে অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে দেশের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দেশের উত্তরে ও পশ্চিমে লবণাক্ততার বিস্তার ঘটছে। পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সরকার ভারতের সঙ্গে ন্যায্য পানিচুক্তি যেমন আদায় করতে পারছে না, তেমনি নদীর অবৈধ দখল, দূষণ ও বালু উত্তোলনও ঠেকাতে পারছে না। রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও ঠিকমতো প্রতিপালিত হতে দেখা যায় না। চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদী ও অবৈধ দখল ও দূষণে দিন দিন মৃতুর দিকে ধাবিত। যদিও বুড়িগঙ্গা ও বালু নদীর অবৈধ দখলে থাকা কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে অধিকাংশই এখনো অবৈধ দখলে রয়ে গেছে। শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ এখনো চলছে। তা প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দেশের ৬৪ জেলায় যেসব নদ-নদী অবৈধ দখলে রয়েছে, সেগুলো দখলমুক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন সংবাদও পাওয়া যায় না। সরকার অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। যারা নদী দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ করার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, অবৈধ দখলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায়, সরকার সেখানে নীরব হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে এক মন্ত্রীর আসকারা থাকা নিয়ে নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মন্তব্য করায় তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও তাদের মদদদাতাদের নামও উচ্চারণ করা যাবে না। এ ঘটনা থেকে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, নদীরক্ষা কমিশন কেন গঠন করা হয়েছে? যদি নদ-নদী রক্ষাই করতে না পারে, তাহলে তাকে কেন ঠুটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকতে হবে? অন্যদিকে, অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে সরকার নীরব থেকে কিংবা ব্যবস্থা নিচ্ছি-নেব বলে এক অর্থে তাদের সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। দায় মুক্তি দিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, নৌপরিবহন সহজ করা, পরিবেশ সুরক্ষা ও লবণাক্ততার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে নদ-নদীর সচলতা ও নাব্যর বিকল্প নেই। সরকার এ বিষয়গুলো কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তা নাহলে, বছরের পর বছর ধরে নদ-নদীর অবৈধ দখল, বালু উত্তোলনের মাধ্যমে কাটাছেঁড়া করে মেরে ফেলার বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না? সরকার যে শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান করেছে, নদ-নদী যদি না-ই থাকে, তাহলে তা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? নদ-নদী রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি এখন যেন অনেকটা কথার কথায় পরিণত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে দেশে ১২৭৪টি নদ-নদী ছিল। বিগত ৫০ বছরে ৫০৭টি নদী হারিয়ে গেছে। নদীগুলো গেল কোথায়? বলা বাহুল্য, এসব নদ-নদী অবৈধ দখলে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যে ১৭২টি নদ-নদী সচল রয়েছে, এখন সেগুলোর ওপর চলছে অবৈধ দখল ও দূষণ। এতে এসব নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এগুলো রক্ষা করতে না পারলে দেশে যে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদ-নদী রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত