ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আবার সেই পুরোনো সহিংসতা

জাতীয় নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা
আবার সেই পুরোনো সহিংসতা

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শনিবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। একই দাবিতে সমাবেশ করেছে সরকারবিরোধী অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এছাড়াও সরকারের পদত্যাগ ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর আরামবাগে মহাসমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। তবে জামায়াতের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানিসহ ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের কারণে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানী। নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। হরতালকে কেন্দ্র করে জননিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। শনিবার নির্ধারিত সময়ের সোয়া এক ঘণ্টা আগেই দুপুর পৌনে ১টায় নয়াপল্টনে দলীয় কা?র্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ শুরু করে বিএনপি। সমাবেশকে ঘিরে পুলিশ-বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সমাবেশ মঞ্চ ত্যাগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। শুধু প্রধান বিচারপতির বাসভবন নয়, হামলা করা হয় পাশের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনের নিচে রাখা গাড়িতে। আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে সেখানে। সেই সংঘর্ষ বিজয়নগরেও ছড়িয়ে পড়ে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে নিহত হয় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ কনস্টেবল আমিনুল ওরফে পারভেজ। তাকে দেশীয় ধারাল অস্ত্রের সাহায্যে আঘাত করা হয়। ওই পুলিশ সদস্যের মাথায় কোপানো হয়েছে। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, মৃত অবস্থায়ই ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইল ও নাইটেঙ্গেল মোড়ে দফায় দফায় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ৪১ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২২ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি মাইক্রোবাস ও পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। ঢাকায় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার কারণে গত শনিবার সারাদিন রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তা ফাঁকা হয়ে পড়ে। অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়।

গতকাল সারা দেশে হরতাল ডাকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। হরতালে জনসাধারণের নিরাপত্তায় শনিবার রাতেই রাজধানীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিএনপির ডাকা হরতালেও বাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে দেন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। গতকাল হরতাল চলাকালে রাস্তায় যানবাহন চলাচল করেছে। তবে সংখ্যায় কম। অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রমও স্বাভাবিক ছিল। হরতাল জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিএনপির হরতাল, অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য নতুন কিছু নয়। বিএনপি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা বছর অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভোটকেন্দ্র পুড়িয়েছে। ট্রাকে আগুন দিয়েছে। নির্বাচন ভণ্ডুল করেছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিপন্ন হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে দেশের শিক্ষাজীবন, স্থবির হয়ে পড়ে দেশের অথনীতি। তছনছ হয়ে যায় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আবার আগুন সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের রাজনীতিতে ফিরে এসেছে। এমনটিই আশঙ্কা করছে দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত