ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছে, চলবে

জালাল উদ্দিন ওমর

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শুধু ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী এবং টেকসই সমাধান হবে। এর কোনোই বিকল্প নেই। ফিলিস্তিনিদের ভূমি তাদের ফেরত দিতে হবে এবং তাদের ভূমিতে তাদের নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে বসবাসের সুযোগ দিতে হবে। বিশ্ব নেতাদের উচিত, এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তার জন্য ইসরাইলি দখলদারিত্বের চির অবসান ঘটাতে হবে। ১৯৬৭ সালের ৫ জুন ইসরাইল আরব রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। ইসরাইল মাত্র এক সপ্তাহের যুদ্ধে ফিলিস্তিনের গাজা, পশ্চিম তীর, জেরুজালেম, মিসরের সিনাই এবং সিরিয়ার গোলান উপত্যকা দখল করে নেয়। পশ্চিমারা ইসরাইলকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে। ১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে মিসর ইসরাইলকে স্বীকৃত দিলে ইসরাইল সিনাই এলাকা মিসরের কাছে ফেরত দেয়। বাকি সব এলাকাতেই এখনো চলছে ইসরাইলের অব্যাহত দখলদারিত্ব। এভাবে শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিরা একটি পরাধীন জাতি হয়ে আছে। তারা শুধু মোকাবিলা করেছে, যখন তখন ইসরাইলি নির্যাতন এবং হত্যাযজ্ঞ। ফিলিস্তিনের যে মানুষগুলো ৫৬ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা সবাই জন্মের পর থেকেই ইসরাইলের নির্যাতনকে মোকাবিলা করে আসছে। সেই নির্যাতনে নিহত হয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। কারাগারে বছরের পর বছর ধরে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি এবং চালিয়ে যাচ্ছে কঠিন এবং অসম এক স্বাধীনতা সংগ্রাম। কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি জন্ম থেকেই উদ্বাস্তু। নিজ মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য ফিলিস্তিনের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা সংগ্রাম করছে এবং জীবন দিচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইসরাইলি আক্রমণ ও নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রতি কোনো পরাশক্তি সাহায্যের হাত বাড়ায়নি এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেনি। এমনকি বিশ্বে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত জাতিসংঘও ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছুই করেনি। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ব্রিটেনসহ পশ্চিমারা সব সময় ইসরাইলকে তার সব কর্মের জন্য নিঃশর্ত সমর্থন এবং সাহায্য সহযোগিতা করে চলেছে। তাদেরই প্রত্যক্ষ সাহায্য, সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরাইল আজ পৃথিবীর অন্যতম বড় সামরিক শক্তির দেশ। ইসরাইলকে রক্ষায় তাদের রয়েছে অব্যাহত কর্মসূচি। আর ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে কোনো রাষ্ট্র যখনই জাতিসংঘে কোনো প্রস্তাব এনেছে, তখনই যুক্তরাষ্ট্র ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা নাকচ করে দিয়েছে। এভাবে ইসরাইলকে কখনই তার অপকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হয়নি এবং শাস্তি পেতে হয়নি। এটা ইসরাইলকে করে তুলেছে বেপরোয়া এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ। কিন্তু এত কিছুর পরেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম দিন দিন বেগবানই হচ্ছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত ইহুদিদের জন্য পৃথিবীতে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না। ১৯১৭ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আর্থার বেলফার তার বেলফার ঘোষণার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইহুদিদের জন্য একটি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২২ সালে ফিলিস্তিন এলাকাটি ব্রিটিশ ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়। ১৯৪৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক ইহুদি কমনওয়েলথ গঠনের অনুমোদন দেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন ফিলিস্তিন প্রস্তাবটি জাতিসংঘে উত্থাপন করে। সে বছর ৩১ আগস্ট ফিলিস্তিনবিষয়ক জাতিসংঘ বিশেষ কমিটির রিপোর্টে ফিলিস্তিনকে আরব ও ইহুদি রাষ্ট্রে বিভক্তির সুপারিশ করা হয়। ২৯ নভেম্বর প্রস্তাবটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এতে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ৫৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয় একটি ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য এবং আরবদের জন্য রাখা হয় ৪৫ শতাংশ। অথচ, তখন ফিলিস্তিনে আরব ছিল ১২ লাখ ৬৯ হাজার আর ইহুদি ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার। ১৯৪৮ সালে ১৫ মে ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট অবসানের তারিখ ঘোষিত হয় এবং এর একদিন আগেই ইসরাইল তার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট স্তালিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান তৎক্ষণাৎ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। এই হলো ইসরাইল রাষ্টের জন্মকথা। এর পরপরই আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়। ১৯৪৮ সালের জুলাইয়ের ১০ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলি হামলায় আরব বাহিনী পরাজিত হয়। অক্টোবরে ইসরাইল হামলা চালায় উত্তর লেবাননের সীমান্ত ও গোলান মালভূমিতে এবং দক্ষিণ আকাবা উপসাগর ও সিনাই উপত্যকায়। এতে ফিলিস্তিনের ৭০ শতাংশের ও বেশি ভূখণ্ড ইসরাইলিদের দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে ইসরাইল আবারো আরব দেশ আক্রমণ করে এবং তার সীমানাকে বিস্তৃত করে। এভাবে বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের অব্যাহত দখলদারিত্ব, সীমাহীন নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতা চলে আসছে। পরাধীন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন তরুণ প্রকৌশলী ইয়াসির আরাফাত। কুয়েতে লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি আজকের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ কয়েকজন মিলে ষাটের দশকে গঠন করেন ফাতাহ আন্দোলন। গড়ে তোলেন পিএলও। তৎকালীন বিশ্বে সমাজতন্ত্রের জয় জয়কার। আরাফাত এবং তার দল ও ক্রমান্বয়ে অনেকটা ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম চেতনায় গড়ে ওঠে। ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে পিএলও’র স্বাধীনতা সংগ্রাম চলতে থাকে। এ আন্দোলন পুরো মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক আনূকল্য লাভ করে