ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বে প্রথম স্বীকৃতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার ফসল
কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বে প্রথম স্বীকৃতি

কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে এই স্বীকৃতির সনদপত্র তুলে দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম খেত্রপাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্যের সংস্থার সনদ পাওয়ায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে আরেকটি সাফল্য যোগ হলো। এর আগে বাংলাদেশ ফাইলেরিয়া ও পোলিও নির্মূল করে সনদ পেয়েছিল। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলে বিবেচিত হওয়ায় জাতিগত প্রশংসাও অর্জন করল বাংলাদেশ। এই অর্জনের পেছনে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ পরামর্শ ও নির্দেশনা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় কালাজ্বরের সংক্রমণ বেড়ে যায়। এই রোগের সংক্রমণের জন্য দায়ী হলো এক জাতীয় পোকা। যা লুটজমিয়া এবং ফ্লেবোটোমাস প্রজাতির স্যান্ডফ্লাই নামে পরিচিত। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে কালাজ্বরের প্রকোপ আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারত, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, নেপাল এবং সুদানের মতো দেশে কালো জ্বরের ঝুঁকি বেশি। ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলোর বেশিরভাগ কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। আর্দ্র আবহাওয়া এবং রাতের বেলায় এই পোকাগুলো উড়ে বেড়ায় এবং মানুষকে কামড়াতে পারে। এই রোগের মূল জীবাণু প্রোটোজোয়া শরীরে প্রবেশের পর রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে প্রভাবিত করে। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রোটোজোয়া জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে, ফলে শরীরে ফুটে ওঠে নানা লক্ষণ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পরিধি জোরদার করারও ওপর জোর দেন। দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন ভরসার জায়গা পরিণত হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিশেষ অবদান দেশের ১৪,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিটি থেকে স্থানীয় প্রায় ৬,০০০ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশের দুর্গম এলাকাতেও প্রস্তুত করা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকগুলো থেকে ৩০ রকমের ওষুধ দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। এর পাশাপাশি গ্রামের মায়েদের নিরাপদ সন্তানপ্রসবের ক্ষেত্রেও কমিউনিটি ক্লিনিক কাজে লাগছে। এর সুফল হিসেবে গত কয়েক বছরের জরিপে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ৩২০ জন থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ১৬৩ জন হয়েছে। একইভাবে প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মৃত্যুহার ৬৫ জন থেকে হ্রাস পেয়ে ২৮ জনে নেমে জাতিসংঘ। বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুহার হ্রাস, শিশুমৃত্যুহার হ্রাস করা, গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদানে বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ সফলতা, করোনাকালীন দুর্যোগে ১৫ হাজার চিকিৎসক, ২৫ হাজার নার্সসহ প্রায় দেড় লাখ মানুষের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

দেশের অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সব ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে বিনাপয়সা ছানি অপারেশনসহ চোখের বিভিন্ন চিকিৎসা সেখান থেকে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝেমধ্যে বহির্বিভাগে লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে রাজধানীর আগারগাঁয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে চোখের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী যেদিন ওই হাসপাতালে যান, সেদিন চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক মেডিকেল কর্মী ছাড়াও ভর্তি হওয়া রোগী ও বহির্বিভাগের রোগীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। দেশের সরকারপ্রধান হয়ে তিনি যখন সাধারণ জনগণের সঙ্গে শামিল হয়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন, তখন মানুষ প্রাণভরে দোয়া করেন আসলেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। প্রধানমন্ত্রী যখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা কমিউনিটি ক্লিনিকে চক্ষুসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন, তখন সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেন। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া মানুষের বক্তব্যে আবেগ ও অনুভূতির যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তাতে অন্যরাও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপ। অথচ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানুষ খাবার ও পোশাকের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে চিকিৎসার ওপর এখন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ হিমশিম খায়। আর সে কারণে সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়ার কারণে মানুষ আশ্বস্ত হচ্ছেন যে, অন্তত বিনাচিকিৎসায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা এখন কম। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিশেষ উদ্যোগগুলো আজ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে। আর জাতি হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত গর্ববোধ করছি। দেশের মানুষের একান্ত কামনা, স্বাস্থ্য খাতের এসব সেবা যেন অব্যাহত থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত