ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

একাদশ জাতীয় সংসদের সমাপ্তি

আবেগঘন বিদায় নিলেন সংসদ সদস্যরা
একাদশ জাতীয় সংসদের সমাপ্তি

একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষ হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ঘোষণা পাঠ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আগে আর কোনো অধিবেশন বসবে না। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশন বসার আগে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। আর সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কালের গহ্বরে হারিয়ে গেল একটি সংসদের মেয়াদকাল। তাই সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে ছিল বিদায়ের সুর। আবার সংসদের অধিবেশনে দেখা হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই আবেগতাড়িত হন। পরস্পরের মধ্যে কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে তারা বিদায় নেন। গত ২২ অক্টোবর থেকে ৯ কার্যদিবস পর্যন্ত অধিবেশন চলে। এই অধিবেশনে আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে ২১টি নোটিশ পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ২৬টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এরমধ্যে তিনি ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ৭২২টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীরা ৫৪১টি প্রশ্নের জবাব দেন। এ অধিবেশনে ২৫টি বিল পাস হয়। একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ১ হাজার ৩৩৬টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এরমধ্যে তিনি ৫৬৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ৩০ হাজার ৬৪১টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীগণ ১৭ হাজার ৭৬২টি প্রশ্নের জবাব দেন। একাদশ সংসদে মোট ১৬৫টি বিল পাস হয়। অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে স্পিকার বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। তিনি বলেন, সরকার ও বিরোধীদলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ সফল সংসদ হিসেবে কাজ চালিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস হচ্ছে সরকার ও বিরোধীদলের অংশগ্রহণে আন্তরিক পরিবেশে জনগণের কল্যাণে কাজ করা। এ সংসদে সেটাই হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘সংসদ জাতীয় রাজনীতির সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এই মহান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি। তিনি বলেন, ‘সংসদ কার্যকর থাকলেই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুসংহত হয়। সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে তারা সরকারকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তার সমাপনী বক্তব্যে দেশবাসীকে অগ্নিসংযোগকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন, তারা কোন বাংলাদেশ চান- ধ্বংসস্তূপের না উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছেই জানতে চাই, তারা কোন বাংলাদেশ চায় এই ধ্বংসস্তূপ নাকি উন্নত বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘একমাত্র নৌকা মার্কাই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দিতে পারে, আর বিএনপি পারে কেবল ধ্বংস করতে। এই বাংলাদেশকে নিয়ে আর কেউ যেন খেলতে না পারে সেজন্য আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত দেশে ধারবাহিক গণতন্ত্র ছিল বলেই দেশ এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক, মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকুক সেটাই আমরা চাই। এদিকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তন হতে হবে। সে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। দশম জাতীয় সংসদ ও চলতি একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদল ছিল জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদ বলেন, অতীতের যে কোনো সংসদের তুলনায় দশম ও একাদশ সংসদ অনেক কার্যকর। বিরোধীদল সংসদে শুধু সরকারের বিরোধিতা করেনি। সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা এবং মন্দ কাজের সমালোচনা করেছে। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ সব রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সংসদ সদস্যরা তাদের বক্তব্যের সময় বার বার অধিবেশন শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। আবার দেখা হবে কি না, সেই বিষয়টিও সামনে আনেন। কোনো কোনো সদস্য বিদায় সম্পর্কিত কবিতার পঙ্ক্তিও পাঠ করেন। সব মিলিয়ে তাদের কণ্ঠে ছিল বিদায়ের সুর। তারা বলেন, আমরা কে কী কোথায় কীভাবে থাকি জানি না। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবার আসতে পারব কি না, দেখা হবে কি না। সবার কাছে দোয়া চান তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত