মানুষ ও যানবাহনের নিরাপত্তা

আবার শুরু হলো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী আরো ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ সকাল ৬টা থেকে আগামী মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সড়ক, নৌ ও রেলপথে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এর আগে ৭২ ঘণ্টার অবরোধের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে বিএনপি আবার অবরোধের ডাক দিয়েছে। অবরোধ চলাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা সারধারণ যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়, যানবাহনে আগুন দেয়, তাতে গাড়ির চালক ও সহায়ক কর্মচারী এবং যাত্রী সাধারণের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। অবরোধের সময় যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়া হলেও মানুষকে কর্মস্থল কিংবা প্রয়োজনে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। অবরোধ চলাকালে মানুষ নিতান্ত বাধ্য হয়ে তার কর্মস্থলে যায়। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামে। মহান সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে যদি অবরোধকারীদের দেয়া আগুন কিংবা লাঠিপেটা অথবা বোমার আঘাতে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়, সেজন্য কে কাকে দায়ী করবে। তবে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার তথা প্রশাসনের। যারা রাস্তা অবরোধ করে নাশকতা করে তারা তো কয়েকজন মাত্র। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো মানুষ এদেশে কম নয়। রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সতর্ক দৃষ্টিতে থাকলে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকমীরা রাস্তা পাহারা কাজটি ঠিক মতো পালন করতে পারলে সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হবে। তারা রাস্তায় চলাফেরা করতে আস্থা পাবে। অবরোধ চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকমী, সমর্থক ও শুভানুধায়ীদের রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের জনগণের ভোট পেয়ে পদ-পদবি ধারণ করবেন, অথচ সেই ভোটারদের বিএনপির সমর্থকরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবে তা তো হতে পারে না। অবরোধ চলাকালে রাস্তায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ভোটারদের কাছে কোনো মুখ নিয়ে যাবেন, সেটা ভাবতে হবে। অবরোধ ডাকার অধিকার বিএনপি আছে তা ঠিক। আবার রাস্তায় যানবাহন নামানোর অধিকারও তো যানবাহন মালিকদের আছে। অবরোধ চলকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে বসে পর্যবেক্ষণ করুক কারা রাস্তায় নামে আর কারা নামেনা। জনগণকে জোর করে তো ঘরে রাখার অধিকার বিএনপির নেই। বিএনপির নেতাকমী ও সমর্থকরা ঘরে থাকুক। তারা যেন এই ৪৮ ঘণ্টা কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য না করেন, অফিস না করেন কিংবা তাদের হাটবাজারে যাওয়ার দরকার নেই। এ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। বছরের শেষ সময় লেখাপড়ারও চাপ থাকে। জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে সন্তান কি স্কুলে যাবে না- এটা কেমন কথা। বিগত দিনে বিএনপি রাস্তাঘাটে যা করেছে, তা যদি আজ থেকে আবার শুরু করে তা হলে মানুষ এটা অনুধাবন করবে যে, আওয়ামী লীগ সরকার এই দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়। সমাজের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংগঠন রয়েছে। আর সেই দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যদি বিএনপি এবং কতিপয় নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দল মানুষকে রাস্তায় নামতে না দেয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে কেন মানুষ আগামীতেও ক্ষমতায় আনবে। রাস্তায় যানবাহন চলাচল ও মানুষের যাতায়াতে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দল যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে মানুষ আগামীতে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে দাঁড়াবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপ কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করছিল, তখনই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, যার কঠিন প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ। এর প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ যুদ্ধও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমতাবস্থায় দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখা একান্ত প্রয়োজন। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয় তাহলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। তাই এ দেশের সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব রকমব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।