ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পোশাক শিল্পে অস্থিরতা

নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে
পোশাক শিল্পে অস্থিরতা

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। আগের তুলনায় রপ্তানি বাড়লেও বর্তমান বাস্তবতায় পোশাকশিল্পে নতুন করে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এরই মধ্যে রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ও চীনভিত্তিক ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বর্তমান দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতি এবং আরেকটি হচ্ছে- আগামী দিনে আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে হ্রাসকৃত পোশাক চাহিদা এই শিল্পের সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে। এর ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে অনেক নারী-শ্রমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাতে পারে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশের মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশই এই খাত থেকে হয়। দেশে ৪ হাজারের অধিক কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ লোক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। কোভিড-১৯ এই পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। যার ফলে অনেক আন্তর্জাতিক আদেশ বাতিল হয়েছে। এতে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। প্রতি ৫ বছর পর পর বেতন পুনঃনির্ধারণের যে বিধান রয়েছে, শ্রমিকরা সেটির বাস্তবায়ন চাইছে। সে লক্ষ্যে সরকারের মজুরি বোর্ডও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং এজন্য আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দেয়া হয়েছে। তারপরও হঠাৎ করে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, মিরপুরসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন, জ্বালাওপোড়াও কর্মকণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে অশুভ উদ্দেশ্য।

শ্রমিক নামধারী একশ্রেণির নেতা আছেন, যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। আবার শ্রমিক অধিকার রক্ষার নামে একশ্রেণির এনজিও আছে। তারাই মূলত সম্ভাবনাময় গার্মেন্টস খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে। তারাই সুকৌশলে শ্রমিক অসন্তোষ লাগিয়ে দিয়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সেখানে শ্রমিক নামধারী নেতা ও এনজিওগুলোর নাম চিহ্নিত করে লিখিত আকারে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের উসকে দেওয়া ও ট্রেড ইউনিয়ন করার চাপসহ বিভিন্নভাবে গার্মেন্টসে অসন্তোষ তৈরি করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চলছে। কোনো কোনো মহল নেপথ্যে থেকে শ্রমিক নামধারী নেতা ও একশ্রেণির এনজিওদের লালনপালন করে। গার্মেন্টস শিল্পে জ্বালাওপোড়াও, ভাঙচুরসহ সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়। শিল্পাঞ্চল পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্প এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত এক দশকে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার নামে শতাধিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় ডজন রয়েছে ফেডারেশন। বেশির ভাগ সংগঠনের নিবন্ধনও নেই। এসব সংগঠনের নেতাদের বেশিরভাগই গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তও নন। এসব ব্যক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের হয়ে কাজ করে থাকেন। তারাই মূলত শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে নিজেরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের চিহ্নিত নেতাদের কেউ কেউ বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। নভেম্বরেই বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা এবং ডিসেম্বর থেকেই বর্ধিত বেতন কার্যকর হবে বিজিএমইএর এমন ঘোষণার পরও থামছে না ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। মালিক পক্ষ, শ্রমিক, সরকার সবাই বেতনের দাবি নিয়ে একমত। তারপরও কেন এসব সহিংস ঘটনা।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাবিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে শ্রমিক নামধারী ৩৬ জনের তালিকা পেয়েছে। তাদের মোবাইল ফোন রেকর্ডসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে, এই ৩৬ জন নেতা বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি পুঁজি করে নানা উসকানি ও ইন্ধন দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়েছেন। নানা উসকানিমূলক কথা বলে শ্রমিকদের খেপিয়ে তুলছেন। তাদেরই উসকানিতে শ্রমিকরা গার্মেন্টস শিল্পে জ্বালাওপোড়াও, ভাঙচুর চালান এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। এসব নেতা গার্মেন্টসে চাকরি করেন না, গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গেও জড়িত না। কিন্তু তারা স্বার্থান্বেষী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট নেতা। তারা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক সংগঠনের নামে কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকেন। ওই সব দেশ তাদের মতলব অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বিক্ষোভে নামার পর থেকে পুলিশ, মালিকপক্ষ এমনকি শিল্প মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গেও শ্রমিকদের কোনো কথা বলতে দিচ্ছেন না এসব শ্রমিক নেতা। উলটো গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে শ্রমিক নামধারী ওই চক্রটি। তারাই সুকৌশলে শ্রমিক অসন্তোষ লাগিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে পরিকল্পিতভাবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করে তাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে। শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পরও হামলার শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ভাঙচুর চালানো হচ্ছে শ্রমিকদের রুটিরুজির পোশাক কারখানাতেও। ফলে শ্রমিকদের এই আন্দোলন আসলে কীসের উদ্দেশ্যে আর এর নেপথ্যে ইন্ধনদাতা কারা সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজিএমইএ ও গার্মেন্টস শ্রমিক নেতারাও বলছেন, কোনো একটি পক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে পরিকল্পিতভাবে সহিসংতা চালাচ্ছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রশাসনকে আরো সচেতন হতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রাণ গার্মেন্টস শিল্প যাতে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, নারীসহ একটি বিশাল শ্রমশক্তি। দেশ ও শ্রমিকদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত